ফের রোববার খালেদা জিয়ার মামলায় অভিযোগ বাতিলের শুনানি

ফের রোববার খালেদা জিয়ার মামলায় অভিযোগ বাতিলের শুনানি

khaleda monchজিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে করা আবেদনের ওপর হাইকোর্টে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা শুনানি  করার পর মামলার কার্যক্রম আগামী রোববার পর্যন্ত  মুলতবি করেন আদালত।

হাইকোর্টের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত  বেঞ্চে  শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম মুলতবির এই আদেশ দেন।

আদালত শুনানিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছে জানতে চান আপনারা কি আর কোনো বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন হ্যাঁ আমরা বলতে চাই। তখন আদালত বলেন, ঠিক আছে আগামী রোববার বেলা ৩টায় আবারও শুনানি হবে।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন। অপরদিকে আবেদনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আবেদনের পক্ষে শুনানিতে বলা হয় মামলায় অভিযোগ গঠন সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। এ সময় আসামি উপস্থিত থাকলেও তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি তিনি দোষী নাকি নির্দোষ। তাই অভিযোগ (চার্জ) গঠনে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

এই যুক্তির বিরোধীতা করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুববে আলম বলেন, এর আগে এই মামলায় ৩৪ বার সময় নিয়েছেন অভিযুক্তরা। অভিযোগে গঠনে অপরাধ কী এবং কে অপরাধ করেছে তা পরিস্কার উল্লেখ ছিল।

তিনি বলেন, আসামি উপস্থিত থাকলেও তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দিলেই জিজ্ঞেস করতে পারেন তিনি দোষী না কি নির্দোষ অন্যথায় প্রয়োজন পড়ে না।

তিনি বলেন, আর বিদেশ থেকে (অর্থ) টাকাগুলো এতিমদের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (বেগম খালেদা জিয়া)ফান্ডে এসেছে। যা পরে তার পরিবারের সদস্যের নামে ব্যবহার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল রোববার সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে খালেদার পক্ষে আবেদনটি করেন তার আইনজীবী। পরে ১৬ ও ১৭ এপ্রিল মোট দুদিন শুনানি হয়।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, খালেদার বিরুদ্ধে দুই মামলায় গঠন করা চার্জ সঠিক হয়নি তাই তা বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় হয়নি বিধায় আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়েছে, নিম্ন আদলতের মামলা সকল নথিপত্র তলব করারও আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না সে সংক্রান্ত আদেশ চেয়ে রুল জারির আবেদনও করা হয়েছে।

রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন এ আবেদন করেন। পরে এই আবেদনের ওপর শুনানি হলে তা বুধবার শুনানি হবে মর্মে ঠিক করেন আদালত।

আদালতে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টিার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, অ্যাডভোকট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ।

গত ১৯ মার্চ বুধবার মহানগর দায়রা জজ বিশেষ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন।  আগামী ২১ এপ্রিল এ বিষয়ে সাক্ষী  গ্রহণ করার জন্য দিন ঠিক করা হয়।

আইনজীবী খোকন বলেন, সরকার দুদককে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলা করেছে। দুদক এ মামলায় যে অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়।

এছাড়া তিনি বলেন, বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার আবেদন না শুনেই এজলাসের বাইরে গিয়ে অভিযোগ গঠন করেছে। যা আইনের পরিপন্থী।

বিচারক শুনানি না করে পেশকারকে দিয়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন এ বিষয়ে ১০ জন আইনজীবী স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। এছাড়া ওই দিনের ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের সংবাদ সংযুক্ত করা হয়েছে বলে আইনজীবী জানান।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এজাহারে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানম নামে এক মহিলার কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। তবে জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে, যা কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়। এই টাকার বৈধ কোনো উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২৬টি ধার্য তারিখ পার হলেও আইনি মারপ্যাঁচে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়নি। সর্বশেষ এ মামলায় খালেদা জিয়া গত বছরের ১১ অক্টোবর আদালতে হাজিরা দেন। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

রাজনীতি শীর্ষ খবর