রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতায় আসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মার্কিন কূটনীতিক রবার্ট ও ব্লেইকের বক্তব্যের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বাংলাদেশ ‘ব্লেইক সাহেবদের’ কথায় চলে না।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সাংবাদিকদের বলেন, “ব্লেইক সাহেবদের কথায় যদি বাংলাদেশ চলতো তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বাংলাদেশ বাংলাদেশের কথায় চলে, বাংলাদেশ বাংলাদেশের জনগণের কথায় চলে।”
“কতো ব্লেইক আসছে গেছে, তাদের কথায় কোনো দিন নীতি নির্ধারণ হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ”, যোগ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লেইক বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সমাধানে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলেই তিনি মনে করেন।
একই দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা মেনে নিলে তার গঠন-কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে বিএনপি রাজি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আগে সুরঞ্জিত সাংবাদিকদের বলেন, “সংলাপতো আর শর্ত দিয়ে হয় না। বিএনপি যদি আগেই শর্ত দেয়, তাহলে তারা সংলাপ চায় না। তারা চায় তাদের দাবি জবরদস্তি করে পাশ করতে।”
গণতন্ত্র সমঝোতার বিষয়, ট্রেড ইউনিয়ন নয়- এমন মন্তব্য করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “মূল কথা হচ্ছে গণতন্ত্রের সাসটেইনেবিলিটি। আমরা গণতন্ত্রটাকে কীভাবে টিকাবো।”
বিরোধীদলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্র করবেন, সংসদকে ফাংশন করতে দেবেন না, সংসদকে অকার্যকর করবেন, অনবরত বয়কট করবেন। তারপর আপনারা বলবেন যে-আমাকে আমার খুশী মতো নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে।”
সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে কি হবে না, তার কোনোটাই আমরা বলিনি। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার ও অনির্বাচিত সরকার চলে না। সুতরাং এটা অসাংবিধানিক।”
উচ্চ আদালতের ওই আদেশের ভিত্তিতেই গত বছর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সরকার, যার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল।
দেশের সংবিধান এখন বাহাত্তরের মূল চেতনায় ফিরে গেছে দাবি করে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা একটা শব্দ, দাঁড়ি-কমাও পরিবর্তন করিনি। যা ছিল বাহাত্তরে, সে অনুযায়ী ৭৩-এ নির্বাচন হয়েছে, এখন তা-ই আছে।”
এরপরও বিএনপির কাছে কোনো গ্রহণযোগ্য ‘ফর্মুলা’ থাকলে তা সংসদে এসে উপস্থাপনের আহ্বান জানান ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
“কোনো প্রস্তাব যদি তারা দেয়, আমরা বলেছি আমরা আলোচনা করবো। সংসদের বাইরের কমিটি কি তাদের ডাকেনি? তারা এসেছে? আসেনি।”
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে সুরঞ্জিত বলেন, “ক্রিকেটে যেমন রানার নিয়ে খেলা যায়, পরীক্ষায় যেমন নকল করা যায়- আন্দোলনে এসব চলে না। আওয়ামী লীগ আওয়ামীলীগের ধারাতেই আন্দোলন করে।”
“বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে; বিএনপি ষড়যন্ত্রে সুন্দর, আন্দোলনে নয়”, যোগ করেন তিনি।