খেলাপি ঋণকে সহনীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারলে অন্তত ২ শতাংশ সুদহার কমবে। ঋণের উচ্চ সুদের অপর কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে মূল্যস্ফীতি কমাতে অর্থসরবরাহ কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। ফলে কমেনি সুদহার।
বিশ্বব্যাংক গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, খেলাপি ঋণ বাড়ায় দেশের ব্যাংকিং খাত আরও চাপের মধ্যে পড়ছে, ব্যাংকের মৌল সূচকগুলো আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে এমনিতেই রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আর এখন বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মান অসন্তোষজনক।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় ভিন্ন ভিন্ন। মুনাফা, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ব্যয়—সব বিবেচনা ধরেও বলা যায়, শুধু খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারলেই অন্তত ২ শতাংশ সুদ কমানো সম্ভব। তবে ২০১৩ সালের হিসাবে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীদের চাপে পুনঃ তফসিলের নীতিমালায় ছাড় দেওয়ার সুযোগে পুরোনো খেলাপিরা সুযোগটি নিয়ে ঋণ নিয়মিত করে নিয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় ১৩ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেও প্রতিযোগী ভারত, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এর পরিমাণ ৩ শতাংশের মতো।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০ বছরের ভারিত গড়ে (ওয়েটেড এভারেজ, ২০০৩ থেকে ’১৩) ব্যাংকঋণের প্রকৃত সুদ রয়েছে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। একই সময়ে আমানতের প্রকৃত সুদ ঋণাত্মক (-) শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় আমানতের প্রকৃত গড় সুদ খানিকটা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণের সুদহার সামান্য বেড়ে হয়েছে ৬ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভারিত গড়ে ঋণের দৃশ্যমান সুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর আমানতের দৃশ্যমান সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হার ছিল ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।