শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে অবশেষে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন স্বনামধন্য সাংবাদিক এবিএম মূসা। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী গতকাল রাতে তাকে গ্রামের বাড়ি ফুলগাজীর কুতুবপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে, গতকাল দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিক এবিএম মূসাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এবিএম মূসার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এসময় শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে সবাই বললেন, ‘এবিএম মূসার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার একটি যুগের অবসান হলো। এবিএম মূসার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের অভিভাবক এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিকদের একজন। তাঁর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সাংবাদিকতা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
এসময় এবিএম মূসার ছেলে নাসিম মূসা ও সাংবাদিক পারভীন সুলতানা ঝুমা জাতীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত সাংবাদিক-জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা সকলে আমার বাবার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করবেন।
পরে বাদ জোহর মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা শেষে বেলা ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে মরদেহবাহী গাড়ি রওয়ানা দেয়। রাতে ফেনীর মিজান ময়দানে বাদ মাগরিব মরহুমের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি ফুলগাজীর কুতুবপুরে নেয়া হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গতকাল প্রবীণ এই সাংবাদিককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, প্রফেসর এমিরেটাস আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনতা।
এছাড়া যেসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শেষ শ্রদ্ধা জানান তার মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), গণফোরাম, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, নোয়াখালী প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ সাংবাদিক অধিকার ফোরাম, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম, যুগান্তর সাংবাদিক পরিবার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, প্রাইম ব্যাংক, নাগরিক ঐক্য, বাংলা মেইল২৪নিউজ, আরটিভি, এটিএন নিউজ, বিদ্রোহী স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রা?হ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, শেরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, নবীনগর (ব্রা?হ্মণবাড়িয়া) প্রেসক্লাব, বোরহান উদ্দিন রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজার নামাজে অংশ নিতে এসে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে সরকার উপকৃত হয়েছে।’
প্রফেসর এমিরেটাস আনিসুজ্জামান বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার পরিচয় ৬২ বছরের। আমি তাঁকে জেনেছি একজন সত্ ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে। সামরিক শাসনের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তিনি যেভাবে এ দেশের মানুষের অধিকারের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন, তা অনুসরণীয়।’
প্রবীণ এই সাংবাদিক বুধবার বেলা সোয়া একটায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। এবিএম মূসা অনেকদিন ধরেই শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সর্বশেষ ২৯ মার্চ তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে তিনি কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় (লাইফ সাপোর্ট) চিকিত্সাধীন ছিলেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়।