ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্য গোপনের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোনিয়া তার পাসপোর্টের প্রতিলিপি জমা না দেয়ায় এ অভিযোগ তোলা হয়।
এর আগে মার্চ মাসে শিখদের একটি সংগঠনের করা মামলায় সোনিয়াকে তার পাসপোর্টের প্রতিলিপি জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন একটি মার্কিন আদালত।
১৯৮৪ সালের শিখবিরোধী দাঙ্গার মামলায় এ নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি নিজ শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ভারতে ব্যাপক শিখবিরোধী দাঙ্গা হয়।
ওই দাঙ্গায় ইন্ধনদাতা কংগ্রেস নেতাদের সোনিয়া আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে মার্কিন আদালতে মামলা করে ‘শিখ ফর জাস্টিস’। এটি শিখদের একটি মার্কিন সংগঠন।
মামলাটি করার সময় সোনিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন কি ছিলেন না তার প্রমাণ চেয়ে তার পাসপোর্টের প্রতিলিপি চায় মার্কিন আদালত।
৭ এপ্রিলের মধ্যে সোনিয়াকে তার পাসপোর্টের প্রতিলিপি জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা দিতে অস্বীকার করায় তার বিরুদ্ধে সত্য গোপনের অভিযোগ তোলা হয়।
এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বিচারককে সোনিয়া জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারত সরকার তার পাসপোর্টের নমুনা পাঠানোর অনুমতি দেবে না।
সোনিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার “লুকানোর কিছু নেই” এবং তিনি অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়তে চান।
কিন্তু ভারতীয় দাঙ্গার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচার চলবে এবং সেখান থেকে সমন জারি করা হবে, এই বিষয়টি মেনে নেবেন না তিনি।
এর আগে শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজি) নামের শিখদের মার্কিন সংগঠনটি সোনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, ১৯৮৪ সালে ভারতে শিখবিরোধী দাঙ্গায় জড়িত কংগ্রেস নেতাকর্মীদের যেভাবে আড়াল করছেন, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ।
২০১৩ সালে ৩ সেপ্টেম্বর সংগঠনটি নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় একটি জেলা আদালতে এ অভিযোগে সোনিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আদালত তখন সাথে সাথে সোনিয়াকে মার্কিন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করে।
ওই সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সোনিয়া গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। ২০১৩ এর ২ সেপ্টেম্বর সোনিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তারপরও তিনি আদালতের সমনের জবাব দেননি।
কিন্তু সমনের জবাব দিতে পারেননি বলে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের আদালতে একটি আবেদন করেন সোনিয়া গান্ধী। তাতে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা খারিজ করার জন্য আবেদন করা হয়।
তবে সমনের জবাব দিতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি ওই আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, তিনি গত বছরের ২ সেপ্টম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন না।
কিন্তু ‘শিখ ফর জাস্টিস’ বলেছে, “পাসপোর্টের নমুনা দিতে অস্বীকার করে সোনিয়া প্রমাণ করেছেন সমন দেওয়ার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন।
তারই প্রেক্ষিতে আদালত বলছেন, সোনিয়া গত বছর তার বিরুদ্ধে সমনের সময় আমেরিকায় ছিলেন না বলে যে তথ্য প্রমাণ দিয়েছেন, তা যথেষ্ট নয়। সেজন্য তার পাসপোর্টের অনুলিপি চেয়েছিল মার্কিন আদালত।
শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজি) অভিযোগ করে, ১৯৮৪ সালে ৩০ হাজার কংগ্রেস কর্মী ইন্দিরা গান্ধী হত্যার প্রতিশোধ নিতে শিখদের ওপর নির্যাতন চালায়। একইসাথে অনেককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের নভেম্বরের ওই দাঙ্গায় কমপক্ষে ৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।