বর্ষবরণে যশোরে সরব সাংস্কৃতিক অঙ্গন

বর্ষবরণে যশোরে সরব সাংস্কৃতিক অঙ্গন

2014-04-08_4_541637সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত যশোরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন সরব। এ উৎসবের প্রস্তুতিকে বিভিন্ন সংগঠনে চলছে নাটক, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত ও যাত্রার মহড়া। একই সাথে সংগঠনগুলো নিজস্বতা ধরে রাখতে রং বে-রঙের নানা বৈচিত্রের নিমন্ত্রণ কার্ড তৈরিতে ব্যস্ত কর্মীরা। পহেলা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠবে যশোরবাসী। বাঙালির সবচেয়ে বড় এই অসম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসবকে ঘিরে যশোরে এখন থেকেই সাজ সাজ ভাব লেগেছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, যশোরে নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখ ভোর থেকেই শুরু হয় শহরের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠান। যা রাত পর্যন্ত চলে। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় মিষ্টিমুখ। এদিন শহরে লাখো মানুষের ঢল নামে। লাল, সাদা, আর খয়েরি রঙের নতুন পোশাকে রঙিন হয়ে উঠে যশোর। এ লক্ষ্যে শুরু হয়ে গেছে নতুন পোশাক তৈরির কাজ। প্রত্যেকটি সাংষ্কৃতিক সংগঠন নিজস্ব নকশায় তৈরি করে নতুন পোশাক। ফলে অনুষ্ঠানস্থলে আলাদা সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। নজর কাড়তে তৈরি করা হয় নানা বৈচিত্রের তোরণ। সব মিলিয়ে লোকজ সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে উৎসব আমেজে মেতে ওঠে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।
পহেলা বৈশাখের সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে বের হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ণিল হবে উঠবে শোভাযাত্রা। একই সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়েছে।
উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক ডিএম শাহিদুজ্জামান জানান, যশোরে পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় পৌর উদ্যানে। উদীচীর উদ্যোগে ভোর ৬টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত, এবারের অনুষ্ঠানে শিশু ও বড় মিলিয়ে ৩০০ শিল্পী অংশ গ্রহণ করবে। থাকবে নাচ, গান, কবিতা ও যাত্রানুষ্ঠান। এবার পরের দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত লোকগীতি পরিবেশন করা হবে। বর্তমানে চলছে এসব অনুষ্ঠান সফল করতে মহড়া।
নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন মনি ও সুরধুনীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু জানান, বিবর্তন যশোর ও সুরধুনী সংগীত অ্যাকাডেমির যৌথ আয়োজনে শহরের নবকিশলয় স্কুল মাঠে সকালে ও বিকেলে রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। সকাল ৬টায় শিশুদের পরিবেশনায় গান, নাচ, আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। আর সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হবে বড়দের পরিবেশনায় একই ধরনের অনুষ্ঠান। বির্বতনের আয়োজনে সকালে শিশুদের পরিবেশনায় নাটক ‘অবাক জলপান’ মঞ্চস্থ হবে। যার নির্দেশনায় রয়েছেন পলাশ তরফদার। সন্ধ্যায় বড়দের পরিবেশনায় নাটক ‘পেজগী’ মঞ্চস্থ হবে। এ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মানস বিশ্বাস। সব মিলিয়ে ২শ’ জন শিল্পী দু’অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। স্কুলের সামনে বসে বিভিন্ন ধরনের স্টল।
সুরবিতানের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস জানান, সুরবিতান সকালে টাউন হল মাঠে ভোর ৬টা থেকে ও বিকেলে নৃত্যবিতানের সাথে বিকেলে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করবে। দু’ অনুষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিল্পী অংশ গ্রহণ করবে।
এছাড়াও পুনশ্চ’র সংগঠক সুকুমার দাস জানান, বাংলাবর্ষ বিদায় উপলক্ষে টাউন হল মাঠে ও নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে যশোর জিলা স্কুলে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ৩০ চৈত্র টাউনহল ময়দানের শতাব্দীর বটমূলের রওশন আলী মঞ্চে বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাক-ঢোল, কাঁশি, মন্দিরা, দোতারা ও একতারার মূর্ছনায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। আরও থাকবে একক ও সমবেত গান, আবৃত্তি, লোকনৃত্য ও নাটক। পরের দিন সকালে সংগঠনের কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের আয়োজন করা হয়েছে।
চাঁদেরহাট যশোর শাখার অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, গাড়িখানা রোডস্থ পুলিশ ক্লাব মাঠে বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল বিকেলে, ১৪ এপ্রিল সকালে ও বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে শতাধিক শিল্পী অংশ গ্রহন করবে।
এছাড়া চারুপিঠ, তির্যক যশোর, শেকড় যশোর, যশোর সাহিত্য পরিষদ, কিংশুক, মাইকেল সংগীত অ্যাকাডেমি, আইডিইবিসহ অন্তত ২০ সংসঠন আলাদাভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে।

জেলা সংবাদ বাংলাদেশ