দেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে করের ন্যায্যতা বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহত্ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অধিভুক্ত অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। ২০ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে।’
‘করব্যবস্থায় ন্যায্যতার বিকল্প নেই, জনগণের উন্নয়নে কর সুশাসন চাই’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাজিফ উদ্দিন খান। অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর এটি সঞ্চালনা করেন।
দেশের নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাওয়া গাড়ি বাইরে বিক্রি করে দেন। কালো টাকা সাদা করার সুবিধাভোগীর ৭৫ শতাংশই উচ্চ-আয়ের।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, হংকং, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য আর ভারতের মতো দেশগুলোতে অফসোর বিনিয়োগের নামে নিয়ে যান। দুর্নীতিতে অর্জিত অর্থ সেখানে সহজেই নিয়ে যাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। সেখানে আরো ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার রয়েছে।’
দেশের ধনীদের মতো বহুজাতিক কোম্পানিও কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের বড় চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকির (সিম রিপ্লেসেমেন্ট বিষয়ে) অভিযোগ রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা করের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা আনার লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তারা বলেন—দেশের মোট রাজস্বের ৬৫ শতাংশ আসে পরোক্ষর কর (শুল্ক ও ভ্যাট) আর ৩৫ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর খাত থেকে। ন্যায্যতার সাধারণ নীতি অনুযায়ী, বেশি আয় হলে বেশি কর দেয়া উচিত। কিন্ত বাংলাদেশে গরিবদের পকেট থেকে রাজস্বের সিংহভাগ নেয়া হচ্ছে।
জাতীয় বাজেটে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্পদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি মনে করেন—সম্পদের ওপর কর আরোপ করা হলে মানুষের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ ধরে রাখার প্রবণতা কমে আসবে। এর ফলে জমির দাম যৌক্তিক উপায়ে কমে আসার সুযোগ তৈরি হবে।
বর্তমানে ২ কেটি টাকার বেশি সম্পদধারীদের ওপর দুই ধাপে সারচার্জ (করের উপর যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ হারে কর ) আরোপ রয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের পর তা পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত আলোচনার জন্য সময় খুবই কম থাকে। এ ছাড়া, আলোচনাও দুর্বল মানের।’
এ ছাড়া, বছর শেষে দেখানো হয় উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) ৮০ শতাংশ বা ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এটি আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা জানার সুযোগ নেই। এ ছাড়া, বাজেট প্রণয়ন নিয়ে অতি পোাপনীয়তারও সমালোচনা করেন তিনি।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন রেজাউল করীম চৌধুরী, কে এম এনামুল হক, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) প্রতিনিধি এলিসন সুব্রত, অধ্যাপক আতাউর রহমান, কলামিস্ট এম এস সিদ্দিকী, মহসিন আলী প্রমুখ।