মন্ত্রিসভা ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বাস্তবায়িত চারটি সমাপ্ত প্রকল্পের সমন্বয়ে নতুন ফাউন্ডেশন গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত বিসিকের সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের সমন্বয়ে ‘ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন’ গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি আইন ২০১৪’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এ নিয়মিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালযের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, বিসিক অতীতে বাস্তবায়ন করেছে এমন চারটি প্রকল্প নিয়ে নতুন আকারে এ ফাউন্ডেশন গঠন করতে যাচ্ছে। সমাপ্ত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মহিলা ও শিল্প উদ্যোক্তা প্রকল্প, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্বনির্ভর প্রকল্প, আয় বর্ধক দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প ও গ্রামীণ অর্থনীতি তেজিকরণ প্রকল্প।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ফাউন্ডেশনের মূলধন গঠনে অর্থ বিভাগ ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের মূলধন ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বর্তমানে লাভসহ ৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সে অর্থও এ ফাউন্ডেশনের মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে বর্তমানে ফাউন্ডেশনের মোট মূলধনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১২৭ কেটি টাকা।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার সুপারিশে সরকার অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর রেজিস্টার্ডভূক্ত এ ফাউন্ডেশন এসোসিয়েশন অব মেমোরেন্ডাম এবং ৫ বছর মেয়াদী বিজনেস প্লান অনুয়ায়ী পরিচালিত হবে। ফাউন্ডেশন দুই বছর কাজ করার পর তৃতীয় পক্ষ দ্বারা এর কার্যক্রম অডিট করবে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, ফাউন্ডেশন দারিদ্র বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋণ ও আনুসাঙ্গিক সহায়তা দেবে। যেমন- ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন প্রযুক্তি উদভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি ও জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে ফাউন্ডেশন ঋণ দেবে।
তিনি আরো বলেন, আজকের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি আইন, ২০১৪’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় আসবে।
তিনি বলেন, পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের ১৯৮৬ সালের এক অধ্যাদেশের ভিত্তিতে এ আইন করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নিদের্শে সে আইনটিই বাংলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে তেমন কোন পরিবর্তন নেই। তবে পরিবর্তন যেটুকু এসেছে, তাকে মৌলিক বলা যাবে না।
তিনি বলেন, খসড়া আইনে পরিচালনা বোর্ডকে কিছুটা ছোট করা হয়েছে, আবার মৎস্য মন্ত্রণালয়কে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আগে যেমন মন্ত্রীই শুধু সভাপতিত্ব করতে পারতেন, এখন মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীও সভাপতিত্ব করতে পারবেন। এছাড়া বছরে দু’টি সভা করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরো বলেন, সভায় ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন আইন, ২০১৪’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে সামরিক শাসনামলে করা এ আইনটির খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে বলে এ আইনটির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়নি।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাইক্রো হলো ক্ষুদ্রের চেয়ে আরো ক্ষুদ্র। আর শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাইক্রোর আলাদা ডেফিনেশন দেয়া আছে। তাই ফাউন্ডেশেনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাইক্রো উভয় শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে।