হলুদের গ্রাম যশোরের জুড়ানপুর

হলুদের গ্রাম যশোরের জুড়ানপুর

mqdefaultগ্রামটির নাম জুড়ানপুর। হলুদের গ্রাম হিসেবে বেশি পরিচিত। যশোর জেলার মনিরামপুর পৌর শহরের পশ্চিমের এই গ্রামটিতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এখানে বসবাস করলেও গ্রামের সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হলুদ চাষের সাথে জড়িত। সেই আদিকাল থেকেই বংশ পরম্পরায় এ চাষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তারা। এ চাষ যেন তাদের যাপিত জীবনের সাথে মিশে আছে। শুধু এলাকার চাহিদা মেটানো নয় বরং এই চাষিদের উৎপাদিত হলুদ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যাচ্ছে বিদেশেও। চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে এ পেশায় আত্মনিয়োগ করছেন। ফলে ওই এলাকায় বেকার খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই যেন কোন না কোনভাবেই এ চাষের সাথে জড়িত। যার প্রমাণ মেলে ফসল ওঠার মৌসুমে ওই এলাকায় গেলে।
হলুদ মসলা জাতীয় একটি উদ্ভিদ। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ মসলা ছাড়া রান্নার কথা ভাবাই যায় না। মাইলবাড়ে, আদাঘাটি, হাইব্রীড (সিঁদুর)সহ বিভিন্ন জাতের হলুদ এ অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। দেশি জাতের হলুদ দামে বেশি হলেও ফলন অপেক্ষাকৃত একটু কম হয়। অপরদিকে হাইব্রিড জাতের হলুদ ফলন বেশি হলেও দাম অপেক্ষাকৃত একটু কম।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় হলুদ চাষে কম বিনিয়োগে অধিক লাভজনক ও অনুকূল পরিবেশ হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষীরা এ চাষে বেশি উৎসাহী। তবে, জুড়ানপুর ছাড়াও উপজেলার ভরতপুর, খানপুর, লাউড়ী, দেবীদাসপুর, শ্যামকুড়, কাশীপুর, ভোজগাতী, পাতন, জয়পুর প্রভৃতি গ্রামেও কম বেশি হলুদ চাষ হয়ে থাকে। বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদের আবাদ শুরু হয় এবং পৌষ-মাঘে ফসল তোলা শুরু হয়।
কথা হয় অনেক হলুদ চাষীর সাথে। প্রবীণ হলুদ চাষি হাসান কাজী বলেন, এবার ১৭ বিঘা জমিতে হলুদের আবাদ করেছি। জমির লিজ, বীজ, সার, শ্রম সবসহ লাখ ছ’য়েক টাকা খরচ হয়েছে। হলুদ জমি থেকে তুলে এনে এখন সিদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করছি সবশেষে শুকিয়ে তা বিশ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব।
প্রান্তিক চাষী অহিদ কাজী জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন অন্যের জমি লিজ নিয়ে। তিনি মনে করেন হলুদ চাষীদের সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দিলে প্রান্তিক চাষীরা আরো লাভবান হবে। বর্গা চাষী কাজী ছাদেক আলী বলেন, হলুদের দাম এবার একটু বেশি। কাঁচা মণ প্রতি ২২শ’ থেকে ২৬শ’ টাকা এবং পাকা ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিধবা রোজিনা খাতুন (৩৫) শ্রম বিক্রি করছেন হলুদ শুকানোর পাড়োনে (স্থানীয় ভাষায় হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের স্থানকে পাড়োন বলে)। তিনি হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন কাজ করে। তার দৈনিক আয় ৮০ টাকা। এতে তার ৩ জনের সংসার চলে। এ গ্রামে পায় ৬০/৭০টি পাড়োন আছে। যা থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, হলুদ একটি অতি প্রয়োজনীয় মসলা। এ চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বল্প সুদে ঋণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।

জেলা সংবাদ শীর্ষ খবর