জাপানে ফাঁসির আদেশ পাওয়ার ৪৬ বছর পর এক ব্যক্তির মামলা আবার শুনানির নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত।
সাবেক বক্সার ইয়াও হাকামাদা ১৯৬৮ সালে তার বস, বসের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এতদিন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে ৭৮ বছর বয়সী হাকামাদা গত ৪৮ বছর কারাগারের কনডেম সেলে জীবন কাটিয়েছেন। তার বসের পরিবার নিহত হওয়ার পর জাপানি পুলিশ টানা ২০ দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রিমান্ডে প্রচণ্ড নির্যাতনের মুখে হাকামাদা স্বীকার করেন এ হত্যাকাণ্ড তিনি ঘটিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে তিনি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নিলেও পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হাকামাদাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, হাকামাদা হচ্ছেন মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘতম সময় ধরে বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যক্তি।
১৯৬৬ সালে একটি সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় নৃশংসভাবে ছুরির আঘাতে সপরিবারে নিহত হন ওই কারখানার মালিক। ইয়াও হাকামাদা সেই সময় ওই কারখানায় কাজ করতেন।
হাকামাদার আইনজীবীরা আদালতের কাছে এখন একথা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘাতকের পোশাকে যার ডিএনএ রয়েছে তিনি হাকামাদা নন।
প্রিজাইডিং জজ হিরোয়াকি মুরাইয়ামা এক শুনানিতে বলেছেন, “এসব পোশাক এই মামলার আসামির নয়। এছাড়া, হাকামাদার নির্দোষ থাকার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হাতে আসায় তাকে আর কারাগারে বন্দি রাখার প্রয়োজন নেই।
১৯৬৬ সালে যে তিন বিচারক হাকামাদার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছিলেন তাদের একজন এখনও বেঁচে আছেন। তিনিও এবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন, বলেছেন, সেসময় তারও মনে হয়েছিল হাকামাদা নির্দোষ।
হাকামাদার ৮১ বছর বয়সি বোন হিদেকো গত ৪৬ বছর ধরে তার ভাইকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি আদালতে নতুন শুনানির সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জাপানের বিচার ব্যবস্থায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রচলন রয়েছে। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘঠনগুলো।