মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন হিসেবে ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও এর সব অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধের আবেদন জানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে আজ বৃহস্পতিবার।
তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনাল আইনের ৭টি ধারায় জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ, আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে পড়ে এমন অপরাধ, অপরাধের ষড়যন্ত্র করা অথবা যেকোনো অপরাধের সহযোগিতা করা।
এই ৭ ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট দল ও সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করার আবেদন করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম নিষিদ্ধের আবেদনও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডিস্থ তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ তদন্ত সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জামায়াতে ইসলামী ও এর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, সহযোগী সংগঠন শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী এবং দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা।
৩৭৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র থেকে সব স্তরের নেতাদের অভিযুক্ত করে তাদের নিষিদ্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে। এতে সাক্ষী রাখা হয়েছে ৭০ জনকে।
তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, জামায়াতের বিরুদ্ধে ৭১সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, “সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী (কেন্দ্র থেকে সব স্তরের নেতৃত্ব) অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত করে ৩৭৩ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ সাত খণ্ডে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণ এবং তিন হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠার অন্যান্য ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে।”
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রেখে সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধনী সংসদে পাস হয়। ওই সময় আইনের ৩ ধারা সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচারের বিধান করা হয়। কিন্তু ২০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির সাজার পাশাপাশি সংগঠনের সাজা কী হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
গত বছরের ১৮ আগস্ট জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। এরই মধ্যে ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।