বর্তমান সরকারের আমলে (২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) কেন্দ্রীয় ও তথসিলি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিট ৪৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে সংসদে জয়নাল আবদিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, গ্রস ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় এক লাখ ৭৯ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এক লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেওয়া নিট ঋণ প্রায় পাঁচ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ নিট প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণগ্রহণের ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে না; বরং বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেসরকারি খাতে ব্যাংক থেকে ঋণ প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ২০১০-১১ অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২৩.৯ শতাংশ ধার্য করা হলেও অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রেখে এ খাতের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ২২ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে লিকুইড মানির কোনও ঘাটতি নেই। তবে সুব্যবস্থাপনার অভাবে কোনও কোনও ব্যাংক আবশ্যকীয় নগদ জমা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে, যা চলমান সংযততর মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘লিকুইডিটি চাপকে প্রশমনের জন্য চাহিদার যথার্থতা বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে রেপো, স্পেশাল রেপো ও লিকুইডিটি সাপোর্ট আকারে লিকুইডিটি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কলমানি সুদ হার ডাবল ডিজিটে থাকলেও এখনও গড়ে তা ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও যৌক্তিক হারে নেমে আসবে বলে আশা করা যায়।’
অপু উকিলের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমান অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ বাবদ ১০৪ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২০০১ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ এক হাজার ৪২৭ কোটি সাত লাখ টাকা। দুই দশক আগে অর্থাৎ ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে দেশকে সাত থেকে আট শতাংশ বা এর অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’র শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব হতে এ পরিমাণ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।’
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। তবে জাতীয় আয়ের হিস্যা হিসাবে সাহায্যের পরিমাণ অনবরত কমছে। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে প্রাপ্ত সাহায্য ছিল ১১.১৭ শতাংশ, গত অর্থবছরে যা ছিল ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
মন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ২২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপি’র মাত্র ২২ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির পরিমাপক সূচকের সকল সূচক ঋন নির্ভরশীল পরিস্থিতির তূলনায় অনেক নিচে। সে কারণে বাংলাদেশকে কম ঋণী দেশ বলা হয়। সুতরাং বাংলাদেশকে কোনওভাবেই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল দেশ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
এছাড়া উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এ ধরনের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। কারণ উন্নত দেশগুলো তাদের জাতীয় আয়ের ০ দশমিক ৭ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য হিসাবে দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নমনীয় বৈদেশিক ঋণগ্রহণের মাত্রা কমালে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার বৈদেশিক ঋণের সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে বৈদেশিক ঋণ যাতে আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করতে জন্য বাংলাদেশ অনমনীয় ও বাণিজ্যিক ঋণগ্রহণ পরিহার করে থাকে।
হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট ৩৮ হাজার ৯৮৭ কোটি আট লাখ টাকা আয় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এর আগে অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৫৮৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রসঙ্গে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন-১৯৯১ সংস্কারের কাজ চলছে। আশা করা যায় আগামী পহেলা জুলাই থেকে নুতন মূসক আইন ও বিধিমালা কার্যকর করা সম্ভব হবে। এতে প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।’