হন্ডুরাসে একটি কারাগারে মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে সংঘটিত হতাহতের ঘটনার পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পোরফিরিও লোবো। হন্ডুরাসের রাজধানী তেগুসিগালপা থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কোমায়াগুয়া কারাগারটিতে মঙ্গলবার রাতে আগুন লেগে ৩৫৬ জনেরও বেশি বন্দী নিহত হয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পরপরই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের কারা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
অধিকাংশ বন্দীই অগ্নিকাণ্ডের সময় নিজেদের সেলে আটক থাকা অবস্থায় ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যায় বলে জানায় সংবাদমাধ্যম। এছাড়া জানায় আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ বন্দীকেই আর চেনার উপায় নেই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউমান রাইটস ওয়াচ এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেছে, হন্ডুরাসের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী রাখার ফলেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি সংস্থাটি দুর্বল কারা ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে দেশের পুরো কারা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াটি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করার জন্য আহবান জানায়।
কর্তৃপক্ষ অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত বন্দীর ভিড়ে ভারাক্রান্ত কারাগারটির কোন বন্দীর আগুন জ্বালানোর কারণে অথবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের ফলে সেখানে আগুনের সূচনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কারাগার ও এর আশেপাশের পরিবেশ বিষাদময়। কারাগারের ভেতর থেকে একটার পর একটা মৃতদেহ ভর্তি ব্যাগ বেরিয়ে আসছে। বেঁচে যাওয়া বন্দীদের অস্ত্রের মুখে কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কারাগারের মূল ফটকের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের ক্ষোভ বাড়ছে। তারা কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করে দাবি করে তাদেরকে এখনও কোন তথ্যই দেওয়া হচ্ছে না।
এ সময় ক্ষুব্ধ স্বজনদের পুলিশ কারাগারের চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রেসিডেন্ট লোবো এই দুর্যোগের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অধীনে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
অগ্নিনির্বাপকেরা জানিয়েছেন সেলগুলো তালাবদ্ধ থাকায় বন্দীদের সেল থেকে দ্রুত বের করতে তারা ব্যর্থ হন। এ সময় সেখানে কোন কারারক্ষীকে দেখা যায়নি বলেও জানান তারা।
বন্দীরা ভবনের ছাদ ভেঙে বেরিয়ে আসে বলে জানান বেঁচে যাওয়া এক বন্দী।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে একটি সূত্র অনুযায়ী এক উন্মাদ বন্দী নিজের বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিলে এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে।
তবে হন্ডুরাসের কারাসেবা কর্তৃপক্ষের প্রধান জানান আগুনের সূচনা বৈদ্যুতিক ত্রটির কারণেও ঘটতে পারে। তবে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছে আগুন লাগার আগে কারাগারটি দাঙ্গা শুরু হয়েছিলো।
তালিকা অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত ৩৫৬ জন বন্দী নিখোঁজ ছিলো বলে জানান স্থানীয় ফরেনসিক বিভাগের প্রধান। আহত বন্দীদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে মারাত্মক আহতদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
হন্ডুরাস পৃথিবীর সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটিতে হত্যাকাণ্ডের হার পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এখানকার কারাগারগুলো অতিরিক্ত বন্দীধারণ ও এখানে বন্দী স্থানীয় অপরাধী চক্রের সদস্যদের কারণে কুখ্যাত।