বিএনপি-জামায়াতের কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না : অর্থমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না : অর্থমন্ত্রী

muhit8অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘গত তিন মাসে বিএনপি জামায়াত জোটের সৃষ্ট ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হবে না। তবে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক সমূহের ছয় মাসের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হার সাড়ে ৬ শতাংশ অর্জিত হবে।’

জাতীয় সংসদে সোমবার চলতি অর্থবছরের বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রতিবেদন উত্থাপনকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক ও অর্থনীতি বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর হতে এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত লাগাতার হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও নির্ভর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার হীনপরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী এ জাতি। একাত্তরে পরাজিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী গোষ্ঠী তাদের সমূলে উৎপাটন রোধে ঘৃণ্য ছোবল দেয়ার অপচেষ্টা করেছে।’

চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ব্যাপারে দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বা তার পূর্বেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সকল সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। কিন্তু এটি অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক হচ্ছে গৃহীত পরিকল্পনা ও সূচিত কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং তা বেগবান করা। উন্নয়ন ধারাবাহিকতার হাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত ও বলিষ্ঠ হাতে থাকায় বর্তমান সরকারের নেতৃত্বেই আমরা রূপকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে যাবো।’

ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বার মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১২-এ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে বেড়েছে জাতীয় রাজস্ব আয়ও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আওতাধীন কর রাজস্ব আদায় চলতি অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৫০ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয় ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার হতে সাড়ে ১৬ শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যবহার হয়েছে ১৮ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা যা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। আমদানি ব্যয় ১৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৮ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার হয়েছে। এ ছাড়া গত ছয় মাসে প্রবাসে আয়ে কিছু নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ ছয় মাসে ১২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে খাদ্যপণ্যের মূল্য অনেকটাই কমবে। উন্নত বিশ্নের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতির স্বাভাবিকায়ন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ হতে কমে ২০১৪ সালের জুন নাগাদ শতকরা ৭ শতাংশে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস করি।’

অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৪ সালে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা শক্তিশালী হওয়ায় বাংলাদেশের রফতানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাড়তি গতি সঞ্চার হবে বলে আমরা আশাবাদী।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ খবর