মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের খোঁজ মিলেনি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের সামরিক সংবেদনশীলতার একটা মহড়া হয়ে গেল। একটি চীনা প্রস্তাব ভারত ‘বিনয়ের সঙ্গে’ নাকচ করে দিয়েছে। তবে চমকপ্রদ হচ্ছে চীনের বিশাল তল্লাশি মিশনে একটি রোবটও অংশ নিয়েছে। সমুদ্রেগর্ভে নিখোঁজ বিমানের ব্ল্যাকবক্স খুঁজতে ওই রোবট কাজ করে যাচ্ছে।
অন্যান্য দেশের ১১টি এবং কেবল চীনেরই ২১টি স্যাটেলাইট দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বিমানটির কোন অবশেষ সন্ধান করে চলেছে। এর আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল খবর দিয়েছে, চীন তল্লাশি অভিযানের শুরুতেই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তবে চীনা নৌবাহিনীর বহুজাতিক বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞতা কম। চীন সরকার অবশ্য বলেছিল তারা চীনা স্থল ভূখ-ের দিকেও নজর রাখছে।
সেই সঙ্গে বলেছিল তারা ভারত মহাসাগর এলাকায় নিখোঁজ বিমান খুঁজতে তাদের যুদ্ধজাহাজ নিয়ে প্রবেশ করতে চায়। ভারত দ্রুত এটা নাকচ করে দিয়েছে। বলেছে তাদের জলসীমায় চীনকে খোঁজাখুঁজি করতে দিতে তারা নারাজ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। তবে ফক্স নিউজ খবর দিয়েছে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে গতকাল নতুন করে তল্লাশি শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আর সেটা ঘটছে চীনের সহায়তায়। চীনা সরকারি সংবাদ সংস্থা ভারতের অবস্থানের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। তবে তারা বলেছে, যে এলাকায় ধ্বংসাবশেষ দেখা গিয়েছিল বলে ইঙ্গিত মিলেছিল সেই এলাকায় চীন তিনটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে।
অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন গতকাল। নিখোঁজ বিমানের ২২৭ জনের মধ্যে ১৫৪ জনই চীনের যাত্রী।
এর আগে নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখার খবর অস্ট্রেলীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী গতকাল ম্লান করে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া এ বিষয়ে যে অভিযান চালিয়েছিল তা কোন সুফল দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে চীন তিনটি যুদ্ধ জাহাজ ও একটি আইসব্রেকার পাঠায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৯শে মার্চ নিশ্চিত করেছিল যে, বাংলাদেশের জলসীমায় মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। নৌ অভিযানের পরিচালক কমোডর এস এম হাকিম জানিয়েছিলেন, ১৪ই মার্চ মধ্যরাত থেকে দু’টি ফ্রিগেট, দু’টি মেরিটাইম পেট্রল এয়াক্রাফট বঙ্গোপসাগর এলাকায় তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
২১শে মার্চ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস আইবিটি খবর দিয়েছে, নয়া দিল্লি বলেছে চীন বিমান খোঁজার নাম করে ভারত মহাসাগরে ভারতেরই পানিসীমায় বিচারণ করতে চাইছে। ভারত এটা হতে দিতে পারে না। চীন ভারতের কাছে দু’টি ফ্রিগেট, চারটি যুদ্ধ জাহাজ, একটি স্যালভেজ ভেসেল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আন্দামান অঞ্চলে ভারতের প্রায় ৫০০ দ্বীপ রয়েছে এবং এর অনেকগুলোতেই ভারতের সামরিক স্থাপনা রয়েছে।
আইবিটি বলেছে, একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, এই অঞ্চলে ভারতের সামরিক বহিঃঘাটি অবস্থিত। এখান থেকে মালাক্কা প্রণালী এবং ৬ ডিগ্রি চ্যানেল তদারকি হয়ে থাকে। আমরা এটা চাই না যে, নিখোঁজ বিমান সন্ধানের নামে চীন এই অঞ্চলে মহড়া দিক।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতের ইতিমধ্যে চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান এলাকায়। আরও তিনটি এয়ারক্রাফট তল্লাশিতে নিয়োজিত রয়েছে। শুক্রবার অপরাহ্নে মালয়েশিয় বাহিনীর সঙ্গে নতুন আরও একটি দূরপাল্লার উভযান এবং একটি স্পেশাল জেট যোগ দেবে।