রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া পোশাক শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা ও এ খাতের পুনর্গঠন না করা হলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প টিকতে পারবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিদেশি চক্রান্ত ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেশের পোশাক খাত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফলে খাতটি দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে আছে। তাই এ খাতকে পুনর্গঠনের দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। পোশাক খাতের পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব যদি আমরা সবাই এক থাকি। আশা করি, বড় দুই রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে এক হবে। নয়তো চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে।’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নসহ কমপ্লায়েন্স ইস্যু দেশীয় পোশাকশিল্পের যাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। সে কারণে পোশাক খাতকে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যেতেই হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে পুনর্গঠনের আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে হবে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এটা সত্য যে পোশাক খাতের শ্রমিকেরা কম মজুরি পান। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দু’টি জোট একর্ড ও অ্যালায়েন্স দেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন শুরু করেছে। এ কাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তদারক করা প্রয়োজন। নইলে দেখা যাবে, তারা এমন পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করছে যে দেশের ৯০ শতাংশ কারখানাই কাজ করতে পারবে না। পোশাক শিল্পকে ধ্বংসে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণেও অনেক সময় পোশাক শিল্পকে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়।
পোশাক রফতানি সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ এখন বছরে পোশাক রপ্তানি করে যে আয় করে তা বিশ্বের ৯০টি দেশের অর্থনীতির চেয়েও বড়। তবে উৎপাদিত পণ্যে সামান্য বিচ্যুতি হলেই ক্রেতারা তা নিতে চান না। তাই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিত্যনতুন উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, পোশাক রপ্তানি করে দেশিয় তৈরি পোশাক খাত এখন বছরে দুই হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করছে। সরকার এবং এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশা, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে তিন হাজার কোটি এবং ২০২১ সালে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হবে।
কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে এটি সম্ভব না-ও হতে পারে। এজন্য পোশাক খাতকে এখনই পুনর্গঠন ও আধুনিকায়ন করতে হবে। তা না হলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে দেশিয় পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না।