ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পড়ন্ত বিকেলে এসে পড়েছে। মাসব্যাপী মেলার আয়ুষ্কাল আর মাত্র পাঁচ দিন। এমন সময়ে বিক্রিবাট্টা থাকে চরমে। তবে এক দিনের হরতালে কিছুটা হলেও ছন্দপতন ঘটেছে। বিক্রিবাট্টা হয়েছে অন্যান্য দিনের চেয়ে কম। এ জন্য বিক্রেতারা হতাশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর একটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, অন্য কর্মদিবসের চেয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম। অনেক স্টলের বিক্রয়কর্মীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে বিকেল থেকে ভিড় একটু বাড়তে থাকে। অবশ্য যেসব ক্রেতা হরতালের মধ্যেও মেলায় এসেছেন তাঁরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই পছন্দের পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন।
বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেন অনুপম টাইয়ের ব্যবস্থাপক মাসদু আলম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এমনিতেই গতবারের চেয়ে এবার মেলা শুরুর দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম ছিল। অব্যবস্থাপনার জন্য ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বিরক্ত। তার পরও শেষ সময়ে এসে একটু জমলেও আবার হরতালের জন্য ক্রেতা কম। সাধারণত সারা দিনে ৫০টির বেশি টাই বিক্রি হলেও আজ (গতকাল) সেটিও হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে মেলায় ব্লেজারের দাম কমেই চলেছে। গত সোমবার গোল্ডেন ইন্টারন্যাশনাল ও রুবী কালেকশনের স্টলের ব্লেজার এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে গতকাল তা ১০০ টাকা কমে এক হাজার ৫০০-তে বিক্রি করার জন্য হাঁকডাক করতে থাকেন প্রতিষ্ঠান দুটির বিক্রয়কর্মীরা। তিন চারটি স্টলে এক হাজার ৪৫০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেল।
পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, মোট ২৭টি ব্লেজার ও কোট বিক্রির প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই অখ্যাত। নীলক্ষেত, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, ভাষানটেকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।
অবশ্য গত দুই বছর দেখা গেছে, মেলার শেষ সময়ে এসে ব্লেজারের দাম কমতে থাকে প্রায় প্রতিদিনই।
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, মেলা শুরুর দিকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
নাসিমউল্লাহ নামের এক ব্লেজার ব্যবসায়ী জানালেন, মেলায় অনেক টাকা দিয়ে স্টল নিতে হয়। কিন্তু যা বিক্রি হয় তাতে পোষায় না। তাই কম দামে বিক্রি করেও ঘাটতি যদি মেটানো যায় তাই এই দাম কমানো, এমনটাই দাবি করলেন তিনি।
অখ্যাত ভিড়ে বিখ্যাত ফিট এলিগেন্স। মানসম্পন্ন ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির মিনি প্যাভিলিয়নে। ফলে মেলার শুরু থেকেই এখানে ব্যাপকহারে ভিড় করেন ক্রেতারা। ফিট এলিগেন্স তিন হাজার ৩০০ টাকায় স্যুট, দুই হাজার ৪০০ টাকায় ব্লেজার ও ৯০০ টাকা দরে প্যান্ট বিক্রি করছে।
ব্লেজার বা স্যুটের সঙ্গে আরও একটি জিনিস প্রয়োজন হয়। মানানসই টাই। আর এই পণ্যের জোগান দিয়ে যাচ্ছে অনুপম টাই। এই প্রতিষ্ঠানটি এবারের বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে ১৬০টি নতুন ডিজাইনের টাই এনেছে। এ ছাড়া আছে পুরোনো প্রায় হাজার খানেক ডিজাইন। লাল সবুজ, বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত, বাংলা বর্ণমালা দিয়ে ভিন্ন ধরনের টাইও তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক জানালেন, ‘আমরা চীন কোরিয়া থেকে ডিজাইন দিয়ে টাই তৈরি করে নিয়ে আসি। তবে কিছু টাই দেশেই তৈরি হয়।’
এবারের মেলায় ৯৬টি প্যাভিলিয়ন, ৪৯টি মিনিপ্যাভিলিয়ন, ৩১৬টি স্টল, ১০টি রেস্তোরাঁ এবং তিনটি মা ও শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র রয়েছে।
মেলায় এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের ১২ দেশ অংশ নিয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, হংকং, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুর। মেলায় ২৮টি বিদেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন আছে। এ ছাড়া বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের জন্য এবার আলাদা জোন করা হয়েছে।
এবারের মেলায় প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ ও শিশুদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।