ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সর্বশেষ ১২ হাজার কোটি ইউরো দুর্নীতির সন্ধান মিলেছে, যা অর্থমূল্যে প্রায় ১২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার সমান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিশনার সিসিলিয়া মামস্ট্রোম সুইডেনের একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন।
সুইডেনের দৈনিক পত্রিকা গুটেনবার্গ পোস্টে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে সিসিলিয়া বলেন, ইউরোপে ক্রমশ বেড়ে চলা দুর্নীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিশ্বস্ততার মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে এবং বৈধ অর্থায়ন থেকে টাকা সরিয়ে পুরো অর্থকাঠামোকে অকেজো করে দিচ্ছে। দুর্নীতির এমন ক্রমবর্ধমান চিত্র রীতিমত শ্বাসরুদ্ধকর।
এ প্রতিবেদন তৈরির জন্য ইউরোপীয় কমিশন ইইউয়ের ২৮টি দেশের প্রশাসন ও অর্থায়ন খাতগুলোতে অনুসন্ধান চালায়। ইউরোপীয় কমিশনের দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির কাজ এটিই প্রথম।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরাসরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির সঙ্গে অধিক পরিমাণে জড়িত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ‘ওলাফ’ সচরাচর অর্থ জালিয়াতি ও দুর্নীতি বিষয়ক ইস্যুগুলো চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর আর্থিক ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় এটি দুর্নীতি রোধে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে জানা গেছে। ২০১১ সালে ওলাফ-এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ৩৫ লাখ ইউরো।
সিসিলিয়া জানান, কিছু কিছু দেশে জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাতগুলো দুর্নীতির জন্যে খুবই অনুকূল, অবশিষ্ট দেশগুলোতে দলীয় অর্থায়নের খাত ও পৌরসংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে কোনো কোনো দেশে সুচিকিৎসার জন্যেও রোগীকে ঘুষ বাধ্য করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালিত দুটি জনমত-জরিপ থেকে জানা যায়, ইউরোপের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ মনে করেন, পুরো মহাদেশে দুর্নীতি শোচনীয় আকার ধারণ করেছে।ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চালানো ১০টি জরিপের ৪টি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও ঘুষসংস্কৃতি বর্তমান ইউরোপে, নতুন কোন ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুইডেনে পরিচালিত এক জরিপে জানা গেছে, শতকরা ১৮ জন নাগরিক এমন মানুষদের চেনেন যারা নিয়মিত ঘুষ আদান প্রদান করে থাকেন। পুরো ইউরোপে এ স্বীকারোক্তির হার শতকে ১২ জন। ইইউ’র পুলিশ সংস্থা ইউরোপোলের দেয়া তথ্য মতে, পুরো ইউরোপ জুড়ে এমন অন্তত ৩ হাজার সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র আছে, যারা দুর্নীতির দুর্ভেদ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে। বিশেষত বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং ইটালিতে এ ধরনের সংঘবদ্ধ চক্রগুলো সবচেয়ে ক্রিয়াশীল। যদিও ঘুষ এবং আয়কর দুর্নীতির মত ‘হোয়াইট কলার ক্রাইম’গুলো সমভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে ইউরোপজুড়ে।
পুলিশ সংস্থা ইউরোপোলের পরিচালক রব ওয়েনরাইট এক বিবৃতিতে ইউরোপের কালোবাজারে অর্থ জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তার দেয়া তথ্যমতে, শুধু গত বছরেই জালিয়াতিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ইউরো, যা অর্থমূল্যে প্রায় ৫২ হজার ৫০০ কোটি টাকার সমান।