আওয়ামী লীগের ইশতেহারই উন্নয়ন পরিকল্পনার দলিল

আওয়ামী লীগের ইশতেহারই উন্নয়ন পরিকল্পনার দলিল

উন্নয়ন পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহারকেই দলিল হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহার আমলে নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাজ শুরু করে দিয়েছে।

জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ ধরনের কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকার কার্যক্রম চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। এদিকে চিঠি পাওয়ার পর এরই মধ্যে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পানিসম্পদ, অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘোষিত ইশতেহারের সঙ্গে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন করতে কমিটিও গঠন করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের আমলে যোগাযোগ অবকাঠামোসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দূর করার লক্ষ্যে গৃহীত যেসব প্রকল্প অসমাপ্ত রয়ে গেছে সেসব কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন ছাড়াও এবারের ইশতেহারে নতুন যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করেই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে মন্ত্রণালয়গুলোকে। এর বাইরে পাশর্্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়াও উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের ব্যাপারেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে।

জানা গেছে, ভারত, চীন ও মিয়ানমারকে নিয়ে চারদেশীয় যোগাযোগ সম্পর্ক (বিসিআইএম কানেকটিভিটি) স্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে এরই মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যেসব দেশে বাণিজ্য সুবিধা রয়েছে সেসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য বাড়াতে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী এরই মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী কাজও শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে তোফায়েল আহমেদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, নতুন দেশে নতুন পণ্য রপ্তানি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার বিষয়গুলোই অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছেন তিনি। বিগত মহাজোট সরকারের আমলে পদ্মা সেতু ছাড়াও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল ফোরলেন হাইওয়ে এবং রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে মেট্রোরেল প্রকল্প, এলিভেটেড এঙ্প্রেস ওয়ে, র্যাপিড বাস ট্রানজিটের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের কোনোটা শুরু হয়েছে, কোনোটা আবার মাঝপথে আটকে গেছে। ইশতেহার অনুযায়ী এবার এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের স্বপ্ন ছিল। যেহেতু আমাদের সরকারকে জনগণ ভোট দিয়ে পুনর্নির্বাচিত করেছে তাই দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। তিনি বলেন, মাওয়া পদ্মা সেতু ছাড়াও নতুন সরকার পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া রাজধানীর সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোরলেন রোড নামে চলমান যে প্রকল্প রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া ঘোষিত ইশতেহার অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানান, ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। মংলা ও চট্টগ্রামে কয়লাভিত্তিক আরও দুটি বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে। গ্যাসের চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাসকূপ খনন এবং গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

এদিকে ইশতেহার অনুসরণ করেই বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণীত হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর শামসুল আলম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে পাঁচ বছরের প্রেক্ষিত নির্ধারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন কি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকীর পর ২০১৫ সালে যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী প্রণীত হবে সেটিরও মূল দলিল হবে এই ইশহেতার।

 

বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর