রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দ্বীমুখি হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এসময় ককটেল ও গুলিতে আট সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌদিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং বিভিন্ন বিভাগে চালু করা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো আজ রবিবার আন্দোলন করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা আজ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করছিলেন। সকাল ১০টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে সমাবেশ করে। অন্যদিকে বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করার বিষয়ে প্রশাসনের ঘোষণায় আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। মিছিল নিয়ে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যায়। একপর্যায়ে সেখানে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাবেশের ভেতর তারা ঢুকে পড়ে। মিছিল থেকে তারা হঠাৎ সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল হামলা চালায়। এসময় পুলিশও তাদের ওপর ককটেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন এবং ককটেলের আঘাতে অর্ধশতাধিক আহন হন। আহত হন আট জন সাংবাদিক। এরপর ক্যাম্পাসজুড়ে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলতে থাকে। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভেতরে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন গ্রন্থাগারের পেছনে। ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তবে ছাত্রলীগ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রুবেল বলেন, সাধারণ শিক্ষাথীদের সমাবেশ থেকে ছাত্রলীগের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জামায়াত-শিবির হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গুরুতর আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সাংবাদিক সমিতি। তারা বিকাল ৪টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহকারি প্রক্টর হেলাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম ও জুলফিকার এবং মহানগর পূর্ব জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিমিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।
চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে। তবে বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবি মেনে না নেওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনরত কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের সমাবেশে ঢুকে হামলা চালিয়েছেন। তারা গুলিও ছুড়েছেন। এ সময় পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।এ ব্যাপারে পুলিশ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। একপর্যায়ে সাংবাদিকদেরও লাঠিপেটা করে পুলিশ।
বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং বিভিন্ন বিভাগে চালু করা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে কোনো বিভাগেই ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি।
অন্যদিকে ‘আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকেরা।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েক দিন ধরে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নস্যাৎ হতে দিতে চাই না। তাই আমরা সব ধরনের বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত কোর্সকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা হবে না—এমন নিশ্চয়তা নিয়েই বিভাগগুলোতে এই কোর্স চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বর্ধিত ফি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে গতকাল প্রেস ব্রিফিং করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ধিত ফি কার্যকর স্থগিত করেছে। কিন্তু আমরা চাই বর্ধিত ফি স্থগিত নয়, প্রত্যাহার করা হোক। আর সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধের মূল দাবি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কোর্সটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।