ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত জনপদের চেহারা যেমন হয় আর কি! চারিদিকে ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন, কান পাতলে শোনা যায় স্তব্ধতার হাহাকার। আবার সেসবের মধ্যেও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় থাকে। থাকে আবার জীবনের জয়গানের সুর বাজিয়ে তোলার প্রতিজ্ঞা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এখনকার অবস্থাটা ঠিক তেমনি।
শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ২৪৮ রানে হেরেছে প্রথম টেস্ট। এমন কিছু যে হতে পারে, এর বিন্দুমাত্র পূর্বাভাসও ছিল না আবহে। বরং গত বছর টেস্টে বাংলাদেশের সূচকটা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। লঙ্কানদের সঙ্গে ঘরের মাঠে সমানে সমান লড়াই ছিল তাই প্রত্যাশিত। কিন্তু মিরপুর টেস্টে এমন বাজেভাবে হেরে যাওয়ার পর স্বভাবতই থমকে গেছে বাংলাদেশ ক্যাম্প। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠার পর এখন চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে সমস্ত মনোযোগ মুশফিকুর রহিমের দলের।
কাল হওয়ার কথা ছিল প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিন। খেলা আগের দিন শেষ হয়ে যাওয়ায় ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল ক্রিকেটারদের। সেখানে অধিনায়কের সঙ্গে এসেছিলেন আরো সাতজন- তামিম ইকবাল, আবদুর রাজ্জাক, নাসির হোসেন, মমিনুল হক, শামসুর রহমান, মাহমুদ উল্লাহ, ইমরুল কায়েস। শিষ্যদের অনুশীলন করানোর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন কোচ শেন জার্গেনসেন। প্রথম টেস্টের ময়নাতদন্তের পাশাপাশি চট্টগ্রামে ভালো করার আশাবাদ তাঁর কণ্ঠে।
‘আমরা সবাই খুব হতাশ। মিরপুরের পারফরম্যান্স আমাদের সাম্প্রতিক মানের ধারেকাছে ছিল না। ম্যাচের পর কাল বিকেলেই আমরা কথা বলেছি। এই ম্যাচকে দ্রুত ভুলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে’- বলেছেন জার্গেনসেন। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং কোনো কিছুই ঠিকঠাক না হওয়াটাকে স্রেফ একটা বাজে ম্যাচ হিসেবে দেখতে চাইলেন কোচ, ‘মাঝেমধ্যে এমন দু-একটি ম্যাচ আসে যখন কিছুই ঠিক হয় না। এমন ম্যাচ খেলি না আমরা অনেক দিন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তো মনে পড়ে না সব বিভাগে এভাবে খারাপ করেছি। হয়তো জিম্বাবুয়ের কাছে হারটার কথা বলা যায়। এখন আমরা ভাবছি স্রেফ একটা বাজে ম্যাচ গেছে।’ প্রথম টেস্টে বেশি দৃষ্টিকটু ছিল ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলে আউট হওয়া। তাঁদের বেশি শট খেলা বন্ধ করার উপায় খুঁজছেন বলে জানালেন জার্গেনসেন, ‘একটা উপায় হতে পারে শট না খেলা (হাসি)। আসলে ছেলেরা জানে ওরা কী ভুল করছে। শ্রীলঙ্কার মতো অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে ভুল করলে এর মাসুল দিতেই হবে। ছেলেরা কষ্ট পাচ্ছে, আমি জানি রাতে ওদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই ম্যাচকে ভুলে আমাদের সামনে তাকাতে হবে।’
দুঃস্বপ্নের এই প্রথম টেস্ট থেকেও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন জার্গেনসেন, ‘সাকিব আরেকটি ভালো ম্যাচ খেলেছে। ব্যাটে-বলে নিজের জাতটা আবার চিনিয়েছে। আল-আমিন ছিল দুর্দান্ত, অনভিজ্ঞ হয়েও দারুণ বোলিং করেছে। রবিউল কয়েকটি স্পেলে ভালো করেছে। আরো কিছু কিছু ছোট ছোট ব্যাপার আছে। তিনটি ফিফটি হয়েছে, পরের ম্যাচে তিন ফিফটিকে বড় সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে হবে।’ ম্যাচে এত খারাপ করার পর আইসিসি পজেশন পেপার ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাননি কোচ। তবে এটি যে মনোযোগ খানিকটা নড়িয়ে দিয়েছিল, সেটি স্বীকার করেছেন জার্গেনসেন, ‘আলোচনা খুব বেশি হয়নি, তবে ছেলেরা হতাশ ছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত এই কারণে মনোযোগ খানিকটা নড়ে যায়। আইসিসির ব্যাপারটি আলোচনায় এলো ভুল সময়ে, যখন টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আবারও বলে নিচ্ছি, এটিকে আমি বাজে খেলার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাই না। দিনশেষে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা ভালো খেলতে পারিনি।’ ২২ গজের উইকেটকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি তিনি, ‘এটি স্পোর্টিং উইকেট ছিল না। তবে এসব নিয়ে এখন কথা বলার মানে নেই। কারণ উইকেট যেমনই হোক, আমরা ভালো খেলতে পারিনি। স্পোর্টিং হোক বা ব্যাটিং হোক বা স্পিনিং উইকেট, ভালো তো খেলতে হবে!’
সেই ভালোটাই প্রথম টেস্টে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এটিকে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রমাণের জন্য এখন চট্টগ্রামে জ্বলে না ওঠার বিকল্প নেই। সেটি মাথায় রেখে জার্গেনসেনের প্রেসক্রিপশন, ‘তিনটি বিভাগেই আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। আর সবচেয়ে আগে বেসিকগুলো ঠিক করতে হবে।’