চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। একই উপজেলায় দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মনোনীত। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিনও নির্বাচন করতে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদিকে পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন চারজন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী, সদস্য নাছির আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তিমির বরণ চৌধুরী। একই অবস্থা বিএনপিতেও। হাটহাজারী উপজেলায় উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলমের নাম ঘোষণা করেন। পক্ষান্তরে সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম সমর্থন দেন ভিপি নাজিম উদ্দিনকে। এভাবেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে আসন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীই এ দুটি দলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দলকেই নির্বাচনের আগে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আরেক অঘোষিত ‘প্রার্থী নির্বাচন’ যুদ্ধে নামতে হচ্ছে। তবে প্রধান দুই দলই কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী দিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে বলে জানা যায়। দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক উপজেলায় একক প্রার্থী ঘোষণার জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবারই তার স্বাক্ষরিত চিঠি আসে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। চিঠিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে একক প্রার্থী নির্বাচনের পরও কেউ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে দলের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী ও কঙ্বাজারের সালাহউদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেন বলে জানা যায়। আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী ঘোষণার চেষ্টা করছি। দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম বলেন, আগামীকাল জেলার উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারণের বৈঠক আছে। বৈঠকেই প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। কেউ দলের সিদ্ধান্ত না মানলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, একক প্রার্থী নির্ধারণে আমরা গতকাল বৈঠক করেছি। বৈঠকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুই পৌরসভার (পটিয়া ও লোহাগাড়া) জন্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচন করবেন তাদের বিরুদ্ধে আগামীতে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, আজ বৈঠকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আর যে প্রার্থী দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রথম দফায় ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উত্তর জেলার হাটহাজারী ও মিরসরাই উপজেলায়। দ্বিতীয় দফায় ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ জেলার পটিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়। ৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।