আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির হাইকমান্ড সংশ্লিষ্ট উপজেলা নেতাদের একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিলেও তেমন কোনো কাজে আসেনি। অন্যদিকে বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীও পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। যদিও জোটের একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় পাঁচ শ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ৯৮টিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে। সোমবার প্রথম ধাপের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহীসহ ২৬১, বিএনপি সমর্থিত ও বিদ্রোহীসহ ১৯৬, জামায়াত সমর্থিত ২৮, জাতীয় পার্টি সমর্থিত ১৬, জাসদ সমর্থিত ৪, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সমর্থিত ৫, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা, সিপিবি, বাসদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপিডিএফ ও এন এম লারমা সমর্থিত জনসংহতি সমিতি সমর্থিত একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। বাকিরা নির্দলীয় ও অন্যান্য দল সমর্থিত পদপ্রার্থী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার রাতে কৃষিবিদদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, উপজেলায় জোটের একক প্রার্থী থাকবে। যদি কেউ এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি দল-মত নির্বিশেষে সব পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিএনপি জোটের একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানান। ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। চেয়ারম্যান পদে এ উপজেলায় তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বৈধ হয়েছেন। একক প্রার্থী নির্বাচন করতে দলীয় নেতাদের মধ্য থেকে গোপন ব্যালটে ভোটের চেষ্টা চালালেও অঙ্গ সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। বিএনপি থেকে প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার চেষ্টা চালালেও যুবদল থেকে দুজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মহিউদ্দিন চৌধুরী মিলন ও সদর থানা যুবদলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব। জামালপুর সদর উপজেলায় তৃণমূল ভোটে জেলা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন মিলন। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন মলি্লক। তিনি বিগত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘সদর উপজেলা বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের প্রত্যক্ষ ভোটে একক প্রার্থী হিসেবে রুহুল আমিন মিলনকে মনোনীত করেছি। এরপর কারও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী আমজাদ হোসেন মলি্লক বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন না হবেন তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার জেলা বিএনপির নেই। দল কারও একক সিদ্ধান্তে চলতে পারে না। সিনিয়র নেতাদের মতামত এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরসরাইয়ে একক প্রার্থী নির্ধারণে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র নেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে দলটি। অবশ্য দল থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দুই উপজেলায় আমাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। একক প্রার্থীর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু সহজে হয়ে উঠছে না। জানা গেছে, দুই উপজেলায় ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সভাপতি-সেক্রেটারির গোপন ভোটের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলেছে জেলা বিএনপি। কিন্তু এ পদ্ধতি মানতে নারাজ ভোটে ছিটকে পড়া প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, প্রার্থী নির্ধারণে দায়িত্বশীল নেতারা পছন্দের নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়েছেন। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুজন করে প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কয়রায়ও সমসংখ্যক প্রার্থী। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির দুই প্রার্থী। এ ছাড়া ছাতক ও সুনামগঞ্জে তিনজন করে প্রার্থী হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপি একক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকেও দিকনির্দেশনা রয়েছে। আশা করছি, তৃণমূলে যোগ্য ও দক্ষ নেতা বাছাই করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মতৈক্যে পেঁৗছাবেন।