খেলা তখন শেষ বলাই যায়। শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। শীতের দুপুরে সেই সময়টায় মাঠে উপস্থিত হাজার দুয়েক ক্রিকেটপ্রেমীকে কিঞ্চিত আনন্দ দিলেন আল-আমিন। দিলরুয়ান পেরেরাকে উইকেটের এদিক-সেদিক উড়িয়ে চার চারটি ছক্কা হাঁকান ১১ নম্বরে নামা এই ব্যাটসম্যান। দর্শকরা তাতেই মহাখুশি। দলের হার নিশ্চিত হওয়ার পর আল আমিনের ব্যাটিং-বিনোদন যে বাড়তি পাওয়া!
বাংলাদেশ যে হারছে, সেটি নিশ্চিত হয়েছিল আগের দিনই। দর্শকরা নিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন, আরও একটি বড় হার লেখা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। ব্যবধান কতটা কমানো যায়, কাল দেখার ছিল সেটি। তা সেই ব্যবধানটাও খুব কমাতে পারেনি মুশফিকুর রহিমের দল। বরং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জায় ডুবতে হল টাইগারদের। শেষ উইকেট হিসেবে রুবেল হোসেনকে যখন পেরেরা সাজঘরে ফেরত পাঠান, তখন দুই দলের ব্যবধান ইনিংস ও ২৪৮ রান। এর আগে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় হার ছিল ২০০৭ সালে। এবারের মতো সেবারও চতুর্থদিনে; ব্যবধান ছিল ইনিংস ও ২৩৪ রানে। তবে সব মিলিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা এড়ানো গেছে, এই টেস্টের সান্ত্বনা হতে পারে সেটিই! ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৩১০ রানের হারটা এখনো সেই তালিকায় সবার উপরে। ৮২টেস্ট ইতিহাসে এ নিয়ে ৩৬ বার টাইগাররা হারল ইনিংস ব্যবধানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে এমন এক ক্ষণে টেস্ট খেলছিল টাইগাররা, যখন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের টেস্ট খেলা শঙ্কার ঘূর্ণাবর্তে চক্কর খাচ্ছিল। দুবাইয়ে সেই শঙ্কার লড়াইয়ে সাফল্যের হাসি হেসেছে বাংলাদেশ। সেই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে পেরে উঠেনি। বরং ছিন্ন ভিন্ন হয়েছেন মুশফিকরা। ইনিংস হারে লজ্জা পেয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মিডিয়ার মুখোমুখিতে তাই বলেছেনও, ‘ভবিষ্যতে আরও বেশি টেস্ট খেলবো। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে কষ্ট পেয়েছি।’ শুধুই কি বিসিবি সভাপতি একা পেয়েছেন কষ্ট? না, দেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী কষ্ট পেয়েছেন প্রিয় দলের এমন লজ্জাজনক হারে। কেননা এই ক্রিকেটাররাই গত বছর সমানে সমানে লড়াই করছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে।
কাল যখন খেলতে নামে টাইগাররা, তখন ম্যাচ বাঁচানো ছিল পুরোপুরি দুঃসাধ্য। প্রতিপক্ষকে পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামাতে আরও ৪৬৪ রান করতে হতো মুশফিকদের। এছাড়া হার এড়াতে খেলতে হতো পুরো দু’দিনের ছয় সেসন। যা একেবারেই কাল্পনিক। কেননা লঙ্কান বোলারদের বিপক্ষে ১০০ ওভারের উপরে খেলার রেকর্ডই রয়েছে দুইবার। গতবার গলে ৬৩৮ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন মুশফিকরা ১৯৬ ওভারে। এছাড়া ২০০৮ সালে মিরপুরে ৪১৩ রান করেছিল ১২৬.১ ওভারে। তাই দুই সেসন ব্যাটিং করা মাস্ক ছাড়া হিমালয় ডিঙ্গানোর মতোই! পাহাড় সমান রানের চাপে ভেঙে পড়েন মুশফিকরা। গতকাল তিন ঘণ্টা ১০ মিনিট ক্রিজে থেকে ব্যাটিং করেছে মাত্র ৪২.৫ ওভার। রান যাগ করেছে ২১৫। যার ৩২ রান এসেছে আল-আমিনের ব্যাট থেকে ; মাত্র ১৮ বলে। এছাড়া তরুণ মুমিনুল হক সৌরভ ছড়িয়েছেন ৫০ রানের ইনিংস খেলে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন ডেব্যুটেন্ট শামসুর রহমান শুভ। প্রথম ইনিংসে অস্থির ব্যাটিং করেছিলেন। গতকাল দিনের দ্বিতীয় বলের বাউন্স বুঝার আগেই সাজঘরে ফিরেন শামসুর। সেই যে শুরু, তারপর আর থেমে থাকেনি। একের পর এক ব্যাটসম্যানরা শামিল হন আসা যাওয়ার মিছিলে। এর মধ্যে চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুমিনুল ও সাকিব ৫২ রান যোগ করেন। যা দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। শেষ উইকেটে আল-আমিন ও রুবেল যোগ করেন ৫৩ রান। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মধ্যে আল-আমিনের আগ্রাসী ব্যাটিং যেমন আনন্দের ধারা বয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের, তেমনি প্রত্যয়ী ব্যাটিং করে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন মুমিনুল। টাইগারদের আসলে গতকাল মাত্র ৪২.৫ ওভারে ধসিয়ে দেন অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা। ১৯.৫ ওভারে ১০৯ রানে নেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেষ্টেই নেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের সপ্তম ডাবল এবং ৩৩ নম্বর সেঞ্চুরি তুলে ম্যাচ সেরা হন মাহেলা জয়াবর্ধনে।
আগামী ৪-৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।