গণতন্ত্র হত্যা ও ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন বুধবার দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিল এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট। তবে প্রায় সবখানেই মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ২৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সাতক্ষীরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন এক বিএনপি কর্মী। রাজধানীতে নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচি পালনের অনুমতি না পেয়ে বেশ কিছু থানা ও ওয়ার্ডে কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া সুপ্রিমকোর্ট ও জজকোর্ট এলাকায় আইনজীবীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি পালনের সময় খিলগাঁও থেকে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ তিন নেত্রীকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে সারা দেশে কর্মসূচিতে বাধা প্রদান এবং গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৯ দলীয় জোট। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ১ ফেব্র“য়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেবে।
এদিকে অনুমতি না দেয়ার পরও থানায় থানায় কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়ায় নয়াপল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। বুধবার সকাল থেকেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাড়ানো হয় র্যাব-পুলিশের সংখ্যা। প্রস্তুত রাখা হয় রায়ট কার ও জলকামান। পুলিশের এমন তৎপরতায় নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রেফতার আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিগত দিনের চেয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল কম।বেলা ২টায় বাড্ডা থানা বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল হয়। মিছিলটি মধ্যবাড্ডা বাজার থেকে শুরু হয়ে পোস্ট অফিস গলি গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বাড্ডা থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, ৯৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলম প্রমুখ। তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে কালো পতাকা প্রদর্শন করে। কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এসকে নোমানের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা শাহ মিরাজ, রানা, পাভেল, রফিক, আরিফ প্রমুখ।পলাশী এলাকায় দুপুর ১২টায় ছাত্রদল সহ-সভাপতি আবু সাঈদ, সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও সহ-পাঠাগার সম্পাদক গাজী সুলতান জুয়েলের নেতৃত্বে কালো পতাকা মিছিল হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশীতার নেতৃত্বে বিকাল ৫টায় রাজধানীর শান্তিনগরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্নার নেতৃত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে কালো পতাকা মিছিল হয়। তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জাকির, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাতুল হানিফ ও আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বাবুর নেতৃত্বে সকাল ১০টায় শতাধিক নেতাকর্মী কালো পতাকা নিয়ে পান্থপথ সিগন্যাল থেকে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হল পর্যন্ত সড়ক প্রদক্ষিণ করে।বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলের ঘোষিত কালো পতাকা মিছিল করেছেন সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতি ভবন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন করিডোর ঘুরে পরে ওই ভবনের সামনেই সমাবেশ করে।
পল্টন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির কালো পতাকা মিছিল বের করলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ।এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়। এছাড়া বংশাল এলাকাসহ রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় জামায়াতে ইসলামী কালো পতাকা মিছিল বের করে। জোটের শরিক কাজী জাফর আহমেদের জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগরী শাখা মুগদা কাঁচাবাজার এলাকায় কালো পতাকা মিছিল করেছে।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মোঃ মফিজুর রহমান লিটন, কাওসার আহমেদ, শাকিল আহমেদ প্রমুখ।
সারা দেশে মিছিল : দেশের বিভিন্ন স্থানে বুধবার কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ২৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।