ম্যানেজারসহ আটক ১৭ ৮ পুলিশ সাসপেন্ড

কিশোরগঞ্জে ব্যাংক লুটের ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজারসহ ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ব্যাংকের ১২ জন এবং ব্যাংকের পাশের বাসার মালিকসহ পাঁচজন রয়েছেন। এ ঘটনায় গত রাতেই ব্যাংকের ডিজিএম শেখ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় চিহ্নিত কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
ব্যাংকের ম্যানেজারকে আটক করায় ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রিন্সিপাল অফিসের কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হককে। গতকাল ব্যাংকে কোনো লেনদেন হয়নি। ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার এ প্রসঙ্গে বলেন, রবিবারের হিসাব ক্লোজ করা হয়নি। তাই নতুন করে লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই সব কিছু স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা যাবে বলে তিনি বলেন। এ দিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, সোনালী ব্যাংকের নিচ তলার ব্যারাকের আটজন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) প্রদীপকুমার দত্ত, জিএম হাসান ইকবাল, ডিজিএম আবদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিশোরগঞ্জে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এখন পর্যন্ত ব্যাংকের চারপাশ পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংকের জিএম হাসান ইকবালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের কিশোরগঞ্জে আসার কথা রয়েছে বলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ব্যাংকের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও ঘটনাটি পৃথকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ডিআইজি নূরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অপরাধ হয়ে থাকে। তবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা। আমরা সে চেষ্টাই করছি। খুব শীঘ্রই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে অপরাধী যারাই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) প্রদীপকুমার দত্ত বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভল্টের মধ্যে আলমারিতে টাকা না রেখে ভল্টের টেবিলে কেন টাকা রাখা ছিল- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি তদন্ত না করে বলা যাবে না বলে জানান। তবে ডিআইজি নূরুজ্জামান এর আগে ব্যাংকে চাকরি করেছেন জানিয়ে বলেন, সাধারণত ব্যাংকের ভল্ট খোলা হয় না। এমনিভাবেই টাকা রাখা হয় বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি রবিবার বিকালে দৃষ্টিগোচর হয় ব্যাংকের লোকজনের। ব্যাংকের পাশের একটি বাসা থেকে সুড়ঙ্গ কেটে ব্যাংকের ভল্ট রিজার্ভ রুমে ঢুকে এ ঘটনাটি ঘটনায় দুর্বৃত্তরা। যে বাসা থেকে সুড়ঙ্গটি কাটা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে সে বাসার ভাড়াটিয়া সোহেল পলাতক রয়েছেন। পুলিশ বাসার মালিক মীনা আক্তারকে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
কে এই সোহেল : ব্যাংক লুটের কথিত নায়ক সোহেলকে খুঁজছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ শহরের ঈশাখাঁ সড়কে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন সোহেল। বাসাটির মালিক কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক আমিনুল হক। তার মৃত্যুর পর তার দুই মেয়ে বাসা দেখাশোনা করেন। তবে তাদের কেউ এখানে থাকেন না। তারা ঢাকায় থাকেন। বাসায় ১১ জন ভাড়াটিয়া। মালিক দুই বোনের মধ্যে একজন ডাক্তার ফেরদৌস মহল রুনি ও অপরজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা মীনা আক্তার। মীনা আক্তারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ভাড়াটিয়া ১১ জনের মধ্যে সোহেল ছাড়া সবাই রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সোহেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের ধারণা সোহেলকে ধরতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। প্রশ্ন উঠেছে কে এই সোহেল। বাসার অন্য ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোহেল প্রায় দুই বছর ধরে এখানে ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন। তবে তিনি এখানে থেকে কী কাজ করেন, তা তারা বলতে পারেননি। তার বাড়ি কোথায় বা আসল পরিচয় কী, সেটাও কারও জানা নেই। সোহেল যে বাসায় থাকতেন, সে বাসার সবকিছুই ওলটপালট অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ব্যাংক লুটের উদ্দেশেই হয়তো সে ব্যাংকের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়েছিল। সোহেল নামটিও হয়তো তার প্রকৃত নাম নয়। এ বাসার ভাড়াটিয়া কল্পনা আক্তার জানান, ঘটনার পর তার স্বামী আঙ্গুর মিয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে গেছে। সোহেলের ব্যাপারে তিনি জানান, সোহেল সকাল বেলায় বের হতো, ফিরত গভীর রাতে। অপর ভাড়াটিয়া মার্জিয়া আক্তারকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। তার স্বামী হাবিবুর রহমান সৌদি প্রবাসী। মার্জিয়ার মা সামিয়া খাতুন জানান, সোহেলের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। পাশের দোকানদার আবদু মিয়া জানান, সোহেলকে তিনি কখনো দেখেননি। সোহেলের বিষয়ে জানার জন্য বাসার মালিক ডাক্তার ফেরদৌস মহল রুনির মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, সোহেলের বিষয়সহ বিভিন্ন দিকেই তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম শেখ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় চিহ্নিত কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেককে। এদিকে যে বাসা থেকে সুড়ঙ্গ কেটে ব্যাংকের ভল্ট রুমে ঢুকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে, সেই সুড়ঙ্গটি ভরাট করে মেরামত করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জেলা সংবাদ বাংলাদেশ