হিজড়াকে সাংসদের ভাই পিটিয়ে হত্যা করলেন!

হিজড়াকে সাংসদের ভাই পিটিয়ে হত্যা করলেন!

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে এক হিজড়াকে স্থানীয় সাংসদের ভাই পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম আদর খাঁ (২০)।

আদরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বহুবল) আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীর ছোট ভাই বেলাল চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে আজ সোমবার থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলা আধুনিক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আদরকে দাফন করা হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই সাংসদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য মুঠোফোন চুরির দায়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার চালাচ্ছেন।

থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, নিহত আদর খাঁ নবীগঞ্জ উপজেলার জহুরপুর গ্রামের দৌলত খাঁর সন্তান। তিনি এলাকার অন্য হিজড়াদের সঙ্গে নিয়ে আউশকান্দি বাজার এলাকায় চলাফেরা করতেন। এলাকার ব্যবসায়ীসহ অনেকের কাছেই আদর পরিচিত মুখ। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদের ভাই বেলাল চৌধুরী আউশকান্দি বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আমিন ডেকোরেটর্সের ভেতরে আদর খাঁকে আটক রেখে ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় তাঁর প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারীও ছিলেন। এ মারধরের আওয়াজ পেয়ে বাজারে লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁরা মারধরের কারণ জানতে চাইলে বেলাল চৌধুরী দাবি করেন, আদর তাঁর মুঠোফোন চুরি করেছে। দুই ঘণ্টা দোকানে আটকে রেখে ওই তরুণের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে বেলাল চৌধুরী আহত আদরকে মুঠোফোন চোর দাবি করে বাজারের পাশে গোপলার বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু ফাঁড়ির দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাকির হোসেন গুরুতর আহতও হওয়ায় আদরকে মুঠোফোন চোর হিসেবে থানায় নিতে অস্বীকার করেন। পরে রাতে বেলাল চৌধুরী ও তার কর্মচারী অটোরিকশায় করে পার্শ্ববর্তী দুর্লভপুর গ্রামে বন্ধু মোমিন আলীর (হিজড়া) বাড়িতে আদর খাঁকে রেখে আসেন।

গতকাল রোববার সকালে খবর পেয়ে আদরের বড় ভাই দিলু খাঁ মোমিনের সহায়তায় ভাইকে বাড়িতে নিয়ে যান। উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার আগে বাড়িতেই আদর খাঁর মৃত্যু হয়।

আদরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ কোনোভাবেই মানতে রাজি নন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, চুরির মিথ্যা অভিযোগে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

আদরের ভাই দিলু খাঁ বলেন, তাঁর ভাইয়ের সারা শরীরে কালো কালো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সাংসদের ভাই বেলাল চৌধুরী ও তাঁর এক কর্মচারী পিটিয়ে আদরকে হত্যা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁদের পরিবারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নবীগঞ্জ কুর্শি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান বলেন, ‘আদর খাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে পুলিশে দেওয়া যেত। কিন্তু এভাবে আইন হাতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসী সহজে মেনে নিতে পারছেন না।’ এটিকে হত্যাকাণ্ড মন্তব্য করে তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

জানতে চাইলে বেলাল চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, মুঠোফোন চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে আদর খাঁর প্রাণহানি ঘটেছে। এতে তাঁর কোনো হাত নেই।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদর খাঁকে সন্দেহজনকভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর কাছে কোনো মোবাইল পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই দিলু খাঁ বাদী হয়ে বেলাল চৌধুরীসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে আজ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংসদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী জানান, চারজন হিজড়া তাঁর ভাইয়ের দোকান থেকে একটি মোবাইল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় দোকানের কর্মচারীরা আদর খাঁকে আটক করেন। এ জন্য উপস্থিত লোকজন তাঁকে মারধর করেন। পরে তাঁকে পুলিশে দিলে, পুলিশ আহত ব্যক্তিকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরদিন তিনি শোনেন, আদর খাঁ মারা গেছে। তিনি বিষয়টি সুষুম তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জেলা সংবাদ বাংলাদেশ