আগামী বুধবার বসছে বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। সন্ধ্যা ৬টায় সংসদ অধিবেশন বসবে। এই প্রথম প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসছে জাতীয় পার্টি। তবে তারা এখনো উপনেতা ও চিফ হুইপ নির্বাচিত করতে পারেনি। যে কারণে সংসদের আসন বণ্টন এখন চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপি-জামায়াত জোটের গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জনের মধ্যে দিয়ে গঠিত দশম সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামী বুধবার। ইতিমধ্যে সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এবার সংসদে থাকছেন না বিএনপি-জামায়াত জোটের কোনো সদস্য। সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর সরকারি দলে না হলেও বিরোধী দলে ছিল বিএনপি। আর ষষ্ঠ সংসদ ছাড়া অন্যগুলোতে কম-বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল জামায়াতের। এবার প্রথমবার বিরোধী দলে এসেছে জাতীয় পার্টি। অবশ্য সরকারেও তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ফলে দশম সংসদের কার্যক্রম হবে কিছুটা নতুন ধরনের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিবেশনকে সামনে রেখে অন্যান্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও আসন বণ্টন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সাধারণত স্পিকার সরকার ও বিরোধী দলের চিফ হুইপকে নিয়ে আলোচনা করে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করে থাকেন। কিন্তু বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এখনো চিফ হুইপ নির্বাচন করতে পারেনি। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি। যে কারণে শেষ মুহূর্তে আজ সোমবার সন্ধ্যায় স্পিকার সরকারি দলের চিফ হুইপের সঙ্গে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করেছেন। সেখানে সামনের সারিতে জাতীয় পার্টির জন্য পাঁচটি আসন রাখা হয়েছে।
সংসদ অধিবেশন কক্ষের সামনের সারিতে জাতীয় পার্টিকে পাঁচটি আসন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, সামনের সারিতে আনুপাতিক হারে যা পাওয়ার কথা তার থেকে একটি বেশি আসন দেওয়া হয়েছে। এখন তারাই ঠিক করবেন সামনের সারিতে কে কে বসবেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, পার্টির শীর্ষ নেতারা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ আগামী মঙ্গলবার স্পিকারকে সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা ও চিফ হুইপের বিষয়েও আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারেও থাকায় সংসদ কেমন হবে তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। আগামী সংসদ কতটা কার্যকর হতে পারে তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে নবম সংসদ থেকে দশম সংসদ আরো বেশি কার্যকর হবে বলে আশাবাদী সরকারী দল। এ বিষয়ে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বহু দেশে বিরোধী দল নেই তারপরও সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। আর বিএনপি না থাকলেও আমাদের সংসদে বিরোধী দল আছে। যারা অতীতের মতো শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে উন্নয়নের কাজে সহায়তা করবে।’ তিনি সরকার ও বিরোধী দলের সব সদস্যকে সংসদ অধিবেশনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংসদের উদ্বোধনী দিনে নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। সংসদের কার্যপ্রণালীবিধি অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের পর অধিবেশনের শুরুর দিন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হবে। ইতিমধ্যে সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল। আর বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। প্রথম দিনেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেবেন। চলতি সংসদের সদস্য শওকত মোমেন শাজাহান মৃত্যুবরণ করায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তা নিয়ে আলোচনার পর কিছু সময়ের বিরতি দেওয়া হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে অধিবেশন মুলতবি করা হবে। এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, চলমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর সংসদ মূলতবি দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের বাধ্য-বাধকতা থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর একটি রুলিংয়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে চলতি সংসদে পাসের জন্য একটি মাত্র বিল জমা পড়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল, ২০১৪ নামের এই বিলটি আগামী সপ্তাহেই সংসদে উত্থাপন করা হবে। আর প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জবাব দানের জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচ শতাধিক প্রশ্ন জমা পড়েছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো মূলতবি প্রস্তাব পড়েনি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়। আর দশম সংসদে এ পর্যন্ত ২৯৭ জন সদস্য শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩১ জন, জাতীয় পার্টির ৩৪ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, জাসদের (ইনু) পাঁচজন, তরিকত ফেডারেশনের দুজন, জেপির (মঞ্জু) দুজন এবং বিএনফের একজন সদস্য রয়েছেন।