খেলা হচ্ছে মিরপুরে। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমী লাখো মানুষের দৃষ্টি এখন দুবাইয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) আজকের বৈঠকের দিকেই সবার মনোযোগ।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কাল সকাল থেকেই ভালোবাসার টানে মাঠে উপস্থিত ছিলেন হাজারকয়েক ক্রিকেটেপ্রমী। শীতল আবহাওয়ায় উপভোগ করেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের ব্যাটিং। টাইগার ক্রিকেটারদের স্ট্রোক খেলাকে স্বাগতও জানিয়েছেন হাততালি দিয়ে। তার পরও মনে হচ্ছিল খেলার কোথায় যেন প্রাণের টান নেই।
ক্রিকেট এখন বাংলাদেশে শুধু খেলাই নয়, প্রাণের মেলাও। ক্রিকেট এখন সংস্কৃতি। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিস্তর প্রস্তাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। তাই দেশের লাখো কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মধ্যে এখন নেই সেই প্রাণের স্পন্দন। সবাই শঙ্কিত। কোথায় যেন ছিঁড়ে গেছে ক্রিকেটপ্রেমের সুর। তবে ক্রিকেটের এ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না হাজার বছরের সংগ্রামী বাঙালি জাতি। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিস্তর ক্রিকেটের প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। মানববন্ধন করছে। অবশ্য এ প্রস্তাব পাস হবে কি না, তা আজ ও কালকের দুবাইয়ে আইসিসির সভা শেষে স্পষ্ট হবে। উত্কণ্ঠিত ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ তাই এখন দুবাইয়ের দিকে।
ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রভাব, আধিপত্য, মোড়লগিরি বজায় রাখতে ৯ জানুয়ারি ‘পজিশন পেপার’ নামে একটি প্রস্তাব দেয় সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের কাছে। তাদের ২১ পাতার বিতর্কিত প্রস্তাবে রয়েছে পাঁচটি অনুচ্ছেদ। প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইসিসির নতুন নির্বাহী কমিটিতে (এক্সকো) স্থায়ী সদস্য থাকবে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। আইসিসির সব কমিটিতেই তাদের কতৃত্ব থাকবে। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, টেস্ট ক্রিকেটে উত্তরণ ও অবনমন থাকবে। র্যাকিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দেশকে ‘ইন্টার কন্টিনেন্টাল’ কাপ খেলতে হবে। সেখানকার চ্যাম্পিয়ন দল ৮ নম্বর দলের বিপক্ষে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ সিরিজ খেলে উপরের স্তরে খেলার সুযোগ পাবে।
তবে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কখনই অবনমন হবে না। তৃতীয় অনুচ্ছেদে রয়েছে, ফিউচার টু্যর প্রোগ্রাম (এফটিপি) থাকবে না। তার পরিবর্তে হবে ‘বাইলেটারাল সিরিজ’। চতুর্থ অনুচ্ছেদে লেখা, আইসিসির রেভিনিউ বণ্টন হবে সেই দেশের আয়ের ওপর ভিত্তি করে এবং পঞ্চম অনুচ্ছেদে লেখা, আইসিসির চেয়ারম্যান, এক্সকো এবং অর্থ ও বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান হবেন ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা। দ্বিস্তরবিশষ্টি ক্রিকেটের প্রস্তাব ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মাথাব্যথা নেই ক্রিকেটপ্রেমীদের। কারণ প্রস্তাব পাস হলে বাংলাদেশকে র্যাংকিং অনুযায়ী দ্বিতীয় স্তরে ক্রিকেট খেলতে হবে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে কন্টিনেন্টাল কাপে।
দ্বিস্তরবিশষ্টি ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো অনুচ্ছেদ নিয়ে চিন্তিত নন এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাদের একটাই দাবি, বরাবরের মতো টেস্ট খেলা। আইসিসির ত্রৈমাসিক সভায় ‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাব এজেন্ডা আকারে উঠবে কি না, এখনো সদ্ধিান্ত হয়নি।
এ প্রসেঙ্গ বিসিবির সাবেক সভাপতি, আইসিসির বর্তমান সহ-সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি সভায় উঠতে হবে। এরপর আলোচনা হবে। তাই এখনই বলা যায় না প্রস্তাবটি পাস হবে কি না। আজ ও কালকের সভার দিকে যখন পুরো দেশ তাকিয়ে, তখন বিসিবি পরিচালক, মিডিয়া চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এ সম্পর্কে কোনো কিছুই বলতে রাজি হননি। শুধু বললেন, সভা নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা নিষেধ। বোর্ড সভাপতি দুবাই থেকে ফেরার পর বিষয়টির ফল দেশবাসীকে জানাবেন। বিষয়টি এমন বিতর্কিত যে পুরো দেশ ক্ষুব্ধ। তাই বিসিবি সভাপতি জনগণের পালস বুঝে বোর্ড পরিচালকদের অনুরোধ করেছেন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে।