উপজেলা নির্বাচনে জেলা থেকে দল সমর্থিত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়ায় এ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি কাঠামো নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার পরও এই নির্বাচনের ওপর পরবর্তী রাজনীতির গতিপথ অনেকাংশে নির্ভর করছে। বিগত পাঁচটি সিটি করপোরেশনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। যে কোনো মূল্যে দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে সাংগঠনিকভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ১৯ ফেব্রুয়ারি ১০২টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১৭টি উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চিঠি দিয়েছেন। ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে শরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপজেলা নির্বাচন জোটগতভাবে হবে না। তবে শরিক দলগুলো থেকে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তাদেরকেও একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় করণীয় নিয়ে তৃণমূল নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে। একক প্রার্থী করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা নেতাদের। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলেই তার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা থেকে শুরু করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত রয়েছে দলে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে দল সমর্থন দেবে। প্রতিটি জায়গায় দল সমর্থিত একক প্রার্থী থাকবে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে যে যাবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে। এটা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত। দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আরপিও অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানার নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে কোনো একজনকে সমর্থন দিতে। কোনোভাবেই কেউ যাতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয় তা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের কোন্দল সৃষ্টি না হয় সে জন্য কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, জোটগত নির্বাচন না হলেও শরিক দলগুলোর প্রত্যেককে একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থাৎ এক উপজেলায় জোটের সব দল থেকে প্রার্থী থাকলেও যেন কোনোভাবেই এক দল থেকে একাধিক প্রার্থী না থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, তারা উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে তৃণমূল নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এদিকে জেলা নেতারা কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন জানিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়েছি। তবে একক প্রার্থী ঠিক করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ কোনো কথা শুনতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের মতামত নিয়েই উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। তিনি জানান, বর্ধিত সভা করে জেলার কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকীকে ওই উপজেলার একক প্রার্থী করা হয়েছে।