দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় সরকারের অধীনে উপজেলায় একক প্রার্থী দেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। তবে স্থানীয় সরকারের পাঁচ সিটিতে দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সফলতা নিয়ে সংশয়ে বিএনপি। সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় গ্রেফতারসহ হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মাঠের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ এখনো ফেরারি। মামলার খড়গ নিয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছাড়া। কেন্দ্র থেকে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও তৃণমূলে দল সমর্থিত যোগ্য প্রার্থীদের কেউ কেউ অপারগতা প্রকাশ করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা নানাভাবে বুঝিয়েও অনেককে রাজি করাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে বিএনপির হাইকমান্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় গতকাল প্রথমধাপে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, উপজেলা একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যেখানে কোনো দলই আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিতে পারবে না। এ ছাড়া এর মধ্যেই সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তৃণমূলের জনগণ এখনো বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের পক্ষে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলে তারা সব বাধা ডিঙ্গিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবে। উপজেলা নির্বাচন ৫ বছর পরপর হয়। তাই এ নির্বাচনে না গেলে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে বিএনপি, যা পরে জাতীয় নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের কেউ কেউ আলাদা নির্বাচন করলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। এ সমন্বয়হীনতায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। তাই নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রেফতার, হামলা-মামলাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূলত দল নিরপেক্ষ হওয়ায় উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নেতারা প্রার্থী হবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের ভিত রচনা করে। তাই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে শর্ত হলো- নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব পাওয়া বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সরকারের জুলুম-নির্যাতনে তৃণমূলের নেতৃত্ব দিশাহারা। বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে পলাতক রয়েছেন অনেক নেতা। যোগ্য নেতাদের উপজেলা নির্বাচনে রাজি করাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিগত পাঁচ সিটির মতো উপজেলায় সফল হতে পারব কি-না তা বলা যাচ্ছে না। সূত্রমতে, ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী নির্ধারণসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট সমর্থিত একক প্রার্থীও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন স্থানে প্রার্থিতা নিয়ে মতদ্বৈধতা রয়েছে। একক প্রার্থীর বাইরে কেউ নির্বাচনে গেলে তাদের প্রতি দলীয় শাস্তি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনের সামগ্রিক দিক নিয়ে গতকাল রাতে ১৮-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের একাধিক নেতা মনে করেন, একতরফা নির্বাচনের পর বর্তমান আওয়ামী লীগের সমর্থন শূন্যের কোঠায়। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে প্রায় সব উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। আর বিএনপি সমর্থিতরা নির্বাচনে অংশ না নিলে সব জায়গায় সংসদ নির্বাচনের মতো একতরফাভাবে নির্বাচন হবে। আবার অনেক জায়গায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও নির্বাচিত হয়ে যাবেন। এতে ওই এলাকায় বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। তাই আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল করতে না দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।