আজ বাদে কাল শুরু বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের ব্যাট-বলের লড়াই। সেই লড়াইয়ে জিততে মরিয়া দুই দল। লড়াইয়ে নামার আগে দুই দলই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানরা। অনুশীলনে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে টাইগার ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ দেশের বাইরে সর্বশেষ যে টেস্ট সিরিজ খেলেছে, সেটার প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। সিরিজ হেরেছিল। কিন্তু লড়াই করেছিল সমানে সমানে। এর মধ্যে গলে টেস্ট ড্র করেছিল চালকের আসনে বসে থেকে। এবার ঘরের মাটিতে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ভালো খেলতে চায় টাইগাররা। গতকাল অনুশীলন শেষে তেমনই জানিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সমানে সমানে লড়াইয়ে জন্য চেয়েছেন স্পোর্টিং উইকেট।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগাররা এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে ১৪টি। সিরিজ ৬টি। এর মধ্যে দুটি সিরিজ খেলেছে ঘরের মাটিতে। এবার নিয়ে তৃতীয়বার সিরিজ খেলবে ঘরের মাঠে। আগের দুই সিরিজ একপেশে হলেও এবার লড়াইয়ের ভাবনা ক্রিকেটারদের মস্তিষ্কজুড়ে। প্রতিপক্ষ দলে কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনা, তিলকরত্নে দিলশান, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, রঙ্গনা হেরাথদের মতো ক্রিকেটার থাকার পরও স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছেন সাকিব, ‘আমাদের বোলিং আক্রমণ ভালো। তারপরও ভালো করা নির্ভর করে উইকেটের উপর। ফ্ল্যাট উইকেট হলে কোনো লাভ নেই। আমার বিশ্বাস যদি স্পোর্টিং উইকেট হয়, তাহলে ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। তাই আমি মনে করি স্পোর্টিং উইকেট বানানোই ভালো। আমাদের বোলিং বিভাগ মূলত স্পিননির্ভর। স্পিন উইকেট বানালে আমাদের মতো ওরাও সুবিধা পাবে। স্পিনের বিপক্ষে ওদেরও ভালো ব্যাটসম্যান রয়েছে। তাই আমি মনে করি স্পোর্টিং উইকেট বানানোই ভালো। যেখানে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা উভয়ের ভালো করার সুবিধা থাকবে।’
গত বছর সাকিবরা টেস্ট সিরিজ খেলেছে তিনটি। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ড সিরিজ ছিল শুধুমাত্র ঘরের মাটিতে। বাকি দুটি দেশের বাইরে। একটি আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্রয়ের পাশাপাশি জিতেছিল ওয়ানডে সিরিজ। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ড্র করেছিল টেস্ট সিরিজ। দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করেছিল একটি টেস্ট। স্বাভাবিকভাবেই আত্দবিশ্বাসী ক্রিকেটাররা। এছাড়া ঘরের মাঠে খেলা বলে সুবিধাও পাবে দল। স্মরণ করিয়ে দেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে খেলা বলে এবার বাড়তি সুবিধা পাবে। এছাড়া গত এক-দেড় বছর ধরে ঘরের মাটিতে ভালো ক্রিকেট খেলছি আমরা। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আশা করি খুব একটা পার্থক্য থাকবে না লড়াইয়ে। এছাড়া ভালো ক্রিকেট খেলায় ক্রিকেটাররাও অনেক আত্দবিশ্বাসী।’
লড়াইয়ে আত্দবিশ্বাস থাকলেও সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনা, দিলশান, ম্যাথিউসদের নিয়ে গড়া প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট শক্তিশালীই মনে করছেন। তারপরও টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখার মতো জয়ের স্বপ্ন দেখছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো দল। তাদের দলে বেশ কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার রয়েছেন। এটা মনে রাখতে হবে টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নিতে হবে। যদিও সাঙ্গাকারা, মাহেলাদের মতো ভালো ক্রিকেটার রয়েছেন। তারপরও আশা করতেই পারি। এজন্য অবশ্য নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে।’
বাংলাদেশ সফরে আসার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে নিজেদের প্রস্তত করেছে শ্রীলঙ্কা। বিসিএল খেলে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন মুশফিকরা। যদিও বিসিএল খেলেননি সাকিব। তিনি ব্যস্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাস টুর্নামেন্ট নিয়ে। তারপরও মনে করেন বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে, ‘আমি মনে করি প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে।’ প্রস্তুতি ভালো হলেও টেস্টে লড়াই করতে হলে সেসন বাই সেসন খেলতে হবে, ‘আমি মনে করি আমরা সবসময়ই জয়ের জন্য খেলি। ড্র এবং ভালো খেলার অবস্থান এখন আর নাই। আমরা এবারও জেতার জন্য খেলব। এজন্য ছোট ছোট সেসনে ভাগ করে খেলতে হবে।’ আগামীকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। এর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন সাকিবের সতীর্থরা।