ক্রিকেট বিশ্বে ‘তিন জমিদার’

ক্রিকেট বিশ্বে ‘তিন জমিদার’

ফাঁস হওয়ার পর থেকেই চরম বিরোধিতার মধ্যে পড়েছে আইসিসির নতুন ‘সংস্কার’ প্রস্তাব, যেটি বাস্তবায়ন হলে ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের আধিপত্য। আর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আইসিসির পূর্ণ সদস্যের বাকি দেশগুলো। ইতিমধ্যে ‘তিন জমিদার’-এর মাতব্বরি রুখতে এককাট্টাও হচ্ছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিকাও। ক্রমবর্ধমান এই বিরুদ্ধমত আঁচ করতে পেরে এখন নতুন পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছে ভারত। এই মাসের শেষে আইসিসির নির্বাহী সভায় যদি প্রস্তাবগুলো পাস না হয়, তাহলে নাকি আইসিসি থেকেই বেরিয়ে যাওয়ার হুমকিই দেবে ভারত। ভারতের বাংলা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র এক প্রতিবেদনে আজ এমনটাই জানানো হয়েছে।
চলতি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসির নির্বাহী কমিটির বৈঠক। সেখানে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরবে ভারত। আর সেই দাবি যদি না মানা হয় তাহলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটাও নাকি ইতিমধ্যে নির্ধারণ করে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চারটি দাবি নিয়ে আইসিসির বৈঠকে হাজির হবে বিসিসিআই। সেগুলো হলো:
১) আইসিসির আয় থেকে ভারতকে আরও বেশি ভাগ দিতে হবে
২) আইসিসি প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের পদ তৈরি করতে হবে। আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদ হবে আলংকারিক, সব ক্ষমতা থাকবে চেয়ারম্যানের হাতেই। প্রথম দফাতেই এই চেয়ারম্যানের পদে বসতে চাইছেন বিসিসিআইয়ের প্রধান এন শ্রীনিবাসন।

৩) তিন বছর অন্তর ভারতে আইসিসি টুর্নামেন্ট দিতে হবে। এই টুর্নামেন্টের মধ্যে থাকতে পারে ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অথবা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ।

৪) ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে হবে বাকিদের তুলনায়।

প্রস্তাবগুলো যে মানা হবে না, সেটা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আর শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে যদি প্রস্তাবগুলো পাস না হয়, তাহলেও নাকি নমনীয় হবে না ভারত। আইসিসি থেকে বেরিয়ে এসে ‘বিকল্প আইসিসি’ গড়ার পরিকল্পনাও আছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হলেও টাকার জন্য বিসিসিআই ‘লোলুপ’ হয়ে উঠেছে বিশেষ কারণে। আইসিসির আয় দিনকে দিন বেড়ে চললেও বিসিসিআইয়ের আয়ে ভাটার টান দেখা দিয়েছে। ভারতীয় দল ইদানীং যে কটা স্পনসরশিপ পেয়েছে, সব আগের চেয়ে কম টাকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিরিজ স্পনসরশিপ আগের তুলনায় অর্ধেক দামে বেচেছে। শচীন টেন্ডুলকার অবসর নেওয়ার পর টেস্ট সিরিজের আকর্ষণও কমে গেছে।

অর্থনৈতিক অবস্থা আরও বিপন্ন হতে পারে, এ বিবেচনাতেই বিসিসিআইয়ের প্রধান শ্রীনিবাসন এই নতুন চাল চেলেছেন। আইসিসি থেকে বাড়তি লভ্যাংশ পাওয়া গেলে ঘাটতিটা মেরামত করতে পারবে বিসিসিআই। কারণ, ঘাটতি হলে বিসিসিআই তাদের অনুমোদিত ক্রিকেট সংস্থাগুলোকে বেশি অনুদান দিতে পারবে না। সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিসিসিআইয়ের ক্ষমতা ধরে রাখার ভোটাভুটির রাজনীতিতে।

এদিকে ক্রিকেট-বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারদিক থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনার মুখেও ভারত নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল। এ মাসের শেষে আইসিসির নির্বাহী বোর্ডের সভায় যে প্রস্তাবগুলো তোলা হবে, সেটি গতকাল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভায় অনুমোদন নেওয়া হয়ে গেছে। মানে পরিষ্কার, নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না বিসিসিআই! সূত্র: আনন্দবাজার ও ক্রিকইনফো।

আন্তর্জাতিক