তিন‘শ কোটি টাকা মুল্যের গুলশানে একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদকে জেল গেটে জিজ্ঞাসবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
মঙ্গলবার দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ গুলশানা থানার ১৮(১২) ১৩ মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মওদুদকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমেদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, ‘১৯৬০ সালের ২৪ আগস্টে গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)।
পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতার প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তার স্ত্রী মিসেস ইনজে মারিয়া প্ল্যাজ (অস্ট্রেলিয়ান) এর নামে ওই প্লটটি ৬৫ সালে লিজ দলিল হিসাবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।
সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত ‘মিনিস্ট্রি অব ক্যাবিনেট অ্যাফেয়ার্স’ জারি পূর্বেই মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও যুদ্ধের পরপরই তার স্বামী মো. এহসানের দেশ ত্যাগের কারণে উক্ত প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মওদুদ আহমদ উক্ত সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ প্রদত্ত আম মোক্তার নামার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দাবিদার দেখানোর জন্য ৭৩ সালের ২ আগস্ট একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করেন এবং তা তার সুবিধামতো সময়ে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে নানা কৌশলে বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ এর ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে উক্ত বাড়িতে বসবাস করে আসছেন তিনি।’
এজাহারে বলা হয়, ‘এ নারীর (ইনজে মারিয়া) স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও মওদুদ আহমদ তার পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা দেখান। পরবর্তীতে ৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী এবং ৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে উক্ত বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। এরইধারাবাহিকতায় হোল্ডিং নং ১৫৯ নং এর প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা দেখিয়ে বরাদ্দ নেন তিনি। ৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া কর্তৃক জনৈক মহসিন দরবার বরাবরে একটি আমমোক্তার নামা সম্পাদন দেখানো হয়। ইনজে মারিয়া ১৯৮৫ সালে মারা যান। এটা জানা সত্ত্বেও উক্ত মহসিন দরবার নামীয় ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আমমোক্তার হিসেবে ৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদ বরাবর চুক্তি সম্পাদনা দেখানো হয়।’
এজাহারে বলা হয়েছে, ‘মওদুদ তার ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে উক্ত বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।’
মওদুদ আহমেদকে মতিঝিলে হেফজতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালত ৩ কার্য় দিবসের মধ্যে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন। তার ভাই মনজুর বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন।