এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মানুষের গুণাবলী সম্পন্ন রোবট তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। তবে এবার তারা জোর দিচ্ছেন ভিন্ন ধরনের এক রোবট নির্মাণে। মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, এমন পরিস্থিতিতে যারা অনায়াসে কাজ করবে।
আগুনের মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে পারবে এরা, হয়ত পারবে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে। এমনকি কোথায় কোথায় ‘ল্যান্ডমাইন’ পোঁতা রয়েছে, তাও ধরে ফেলতে পারবে এই উন্নত অতিমানবীয় রোবট।
কোরোইবোট নামের এই রোবটগুলোর নাম রাখা হচ্ছে প্রাচীন গ্রিসে আয়োজিত বিশ্বের প্রথম অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কোরোইবোস অফ এলিসের নামে।
এখানে বলে রাখা ভালো, কোরোইবোস আদতে একজন রাধুনি হয়েও অলিম্পিকের সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, অনেকটাই যেন অতিমানবীয় ছিল তার গতি, তার চলার ধরণ। আর তাই তো এই নামকরণ।
সে যাই হোক, তিন বছরের এই প্রকল্পে প্রধানত জোর দেয়া হয়েছে রোবটের পায়ের গঠনের ওপর। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য মানুষের মতো চলাফেরা করবে এমন পা নির্মাণ করা।
৪০ জন ইউরোপীয়, ইসরায়েলি এবং জাপানি বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে কাজ করছেন। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ইউরো। আর পুরো দলের নেতৃত্বে আছেন জার্মান গণিতবিদ হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাটিয়া মোমবোর।
অধ্যাপক মোমবোর জানালেন, এখন পর্যন্ত যেসব রোবট তৈরি হয়েছে তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল সোজা বা বিপরীত দিকে হাঁটতে পারে। কিন্তু এবার তারা প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের মতো রোবট নির্মাণ করতে চান, যারা প্রয়োজনে নিজের গতি পাল্টাতেও সক্ষম হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প সুনামি, দাবানল এমনকি দুর্ঘটনা – এগুলোর সময় মানুষকে উদ্ধারে সাহায্য করবে এসব রোবট। আর সেটা সম্ভব হলে সেটা যে একরকম অসাধ্য সাধন হবে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, তাহলে এই কোরোইবোট আগুনের মধ্যে হেঁটে মানুষকে উদ্ধার করতে পারবে, যা মানুষের পক্ষে সাধারণত সম্ভব নয়।
বার্লিনের ‘ইনস্টিটিউট ফর ফিউচার স্টাডিজ অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাসেসমেন্ট’-এর সিনিয়র গবেষক রবার্ট গাসনার অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এই ধরনের রোবট তৈরি একেবারেই সম্ভব নয়।