বাংলাদেশের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নেয়া নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণায় নতুন কিছু নেই। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের
পররাষ্ট্র দপ্তর ইতিপূর্বেই জানিয়েছে পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের সরকারের সঙ্গে নয়, পুরো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককেই গুরুত্ব দেয়। একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব নেয়া সরকারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বেলায়ও নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রাচারে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ অব্যাহত আছে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অব্যাহত রাখা মানেই বাংলাদেশের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেয়া নয়। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙক্ষার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন ঘটেনি বলে এর অগ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থানে কোন পরিবর্তন হয়নি বরং নবনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সময় দুপুর দু’টায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপ-মুখপাত্র মারি হার্ফের নিকট বাংলাদেশ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে স্বীকৃতি দেয়নি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে এখন যে সরকার গঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্র কি তাকে স্বীকৃতি দেবে? জবাবে মারি হার্ফ বলেন, এরকম সিদ্ধান্তগুলো ঠিক এভাবে নেয়া হয় না। নির্বাচিত সরকারগুলোর সঙ্গে আমরা অবশ্যই কাজ করে থাকি। কিন্তু এই নির্বাচন (বাংলাদেশের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন) বিষয়ে আমাদের হতাশার কথা আমরা ইতিমধ্যেই সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। কেননা, নতুন সংসদের প্রায় সবগুলো আসনেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না কিংবা নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এই (নির্বাচন) বিষয়ে যেহেতু আমাদের উদ্বেগ রয়েছে সুতরাং আমরা তা স্পষ্ট করেই বলবো। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মারি হার্ফ বলেন, আমরা কাজ করা অব্যাহত রাখি, অবশ্যই আমরা অব্যাহত রাখবো। একই সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট উদ্বেগের কথাও আমরা অব্যাহত রাখবো। পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এ বিষয়ে গতকাল বিকালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র এমিলি হর্নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় নতুন কিছু নেই। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। কেননা, আমরা আগেও বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের সরকারের সঙ্গে নয়, পুরো রাষ্ট্রের সঙ্গেই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দিলেও গতকাল চীন বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ইতিপূর্বে রাশিয়াও বাংলাদেশের নতুন সরকারের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে- এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কি- মানবজমিনের এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র এমিলি হর্ন বলেন, অন্য দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করে না। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আমরা আগেই জানিয়েছি এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার।