বিএনপি-জামায়াতকে আন্দোলনের নামে সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সহিংসতা জ্বালাও পোড়াও বন্ধ না করলে কীভাবে তা বন্ধ করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা দিতে যত কঠোর হওয়া দরকার সরকার ততই কঠোর হবে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনি আন্দোলনের নামে অনেক সহিংসতা করেছেন। মানুষ হত্যা করেছেন। যানবাহন পুড়িয়েছেন। বৃক্ষনিধন করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সহিংসতা করে আপনি ক্ষমতায় আসার যে স্বপ্ন দেখছেন তা কখনোই পূরণ হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও পোড়াও কোনো সমাধান হতে পারে না। যদি কোনো সমস্যা থাকে আসুন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করি। আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দেশের মানুষ আপনার আহ্বানে সাড়া দেয়নি। দেশের মানুষ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোট কেন্দ্র গিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনি বলেছেন আমি আর কখনোই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবো না। বিরোধী দলেও থাকতে পারবো না। আপনি আওয়ামী লীগের জন্য যা বলেন তার উল্টোটাই হয়। আপনার সমালোচনা আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।
জামায়াত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার কাজ শুরু করেছি। বিচারে দণ্ডপ্রাপ্তদের রায় কার্যকর করা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডিতদের রায় কার্যকর করা হবে বলেও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে না আসায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হয়নি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভূল বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। পরাজিত হয়ে বিএনপি নেত্রী জ্বালাও পোড়াও করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনার প্রতিশোধের আগুন দেশকে জ্বলতে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে যত কঠোর হওয়া দরকার তার সরকার ততই কঠোর হবে।
তিনি বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন। অনেক খেলা দেখিয়েছেন। আর নয়, এবার হরতাল-অবরোধ বন্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে জনগণ প্রমাণ করেছে তারা এ দেশে শান্তি চায়। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সময় কিছু বলেনি। কারণ, তখন জনগণের নির্বাচিত সরকার ছিল না। এখন জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছে। তাদের জানমাল রক্ষার জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার তত কঠোর হবো।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ সকল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। জনগণ তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে উনার (খালেদা জিয়া) মনে শান্তি থাকে না। উনার মনে তখন অশান্তির আগুন জ্বলে। তাই তিনি হরতাল-অবরোধের নামে পুলিশসহ অনেক নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। এই অশান্তি বেগমের আক্রমণ থেকে কেউ রেহাই পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছেন জেনারেল জিয়া। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
এ সময় দেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও গোপালগঞ্জ নিয়ে মন্তব্যের জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও তার জোটের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।