পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে আটক করা হয়েছে ঢাকার এক তরুণী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিককে। নিজে দাবি করেছেন, ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে বিক্রি করা হয়েছিল তাকে। সেখানে একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। তবে এক সহৃদয় যুবকের সহায়তায় তিনি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গিয়েছেন। পুলিশ বলছে, সন্দেহ হওয়ায় তারা তাকে সোমবার বালুরঘাট স্টেশন থেকে আটক করে। তার কাছে বাংলাদেশের কোন পাসপোর্ট বা ভিসা পাওয়া যায় নি। বর্তমানে তাকে মালদহের একটি হোমে রাখা হয়েছে। তরুণীটি জানিয়েছেন, তার নাম বর্ষা চৌধুরী। ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন একটি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকায় কাজ করেছেন। পরে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করছিলেন। বর্ষা (১৭) পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে চার বান্ধবী এবং তিন বন্ধু মিলে যশোরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকেই ইছামতি নদীতে নৌবিহারে বের হওয়ার প্রস্তাব করে সুজন ও মনির। এক পর্যায়ে তারা ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতে যাওয়ার পর বন্ধু সুজন প্রস্তাব দেয় ভারতের গুজরাটের আমেদাবাদে তার আপন মামা থাকেন। সেখানেই তারা যাবেন। এই প্রস্তাবে বর্ষা প্রথমে আপত্তি করলেও পরিস্থিতি অনুকূলে না বুঝতে পেরে রাজি হয়ে যান। হাওড়া হয়ে বর্ষাদের নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে আমেদাবাদে। সেখান থেকে রাজস্থানের জয়পুরের একটি হোটেলে। সেখানে ২০ হাজার রুপিতে তাকে বিক্রি করে দিয়ে সুজন-মনির চম্পট দেয়। বর্ষাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। সেখানে তিনি যা হারানোর সবই হারান। তবে হোটেলের বাঙালি এক কেয়ারটেকারের সাহায্যে পালিয়ে হাওড়া হয়ে সোমবার রাতে হাওড়া-বালুরঘাট তেভাগা এক্সপ্রেসে করে দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পথেই বর্ষা বাংলাদেশী বলে কোন একজন যাত্রীর সন্দেহ হয়। ওই যাত্রী স্থানীয় পুলিশকে খবর দেন। বালুরঘাট স্টেশনে নামলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে বর্ষাকে। বালুরঘাট থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষার সঙ্গে আরও তিন বন্ধুর নাম ও পরিচয় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনও মুখ খুলছে না। বর্ষার সঙ্গে আসা আরও তিন তরুণীর খোঁজে পুলিশ গুজরাট ও রাজস্থান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। পুরুষ বন্ধুদেরও খোঁজ করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ডিএসপি উত্তম ঘোষ জানান, বাংলাদেশী ওই তরুণীকে মালদার একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনা শুনে সত্যিই অবাক হয়েছি আমরা। গত এক বছরে এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষিতা মেয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়ে ভারতে পাচার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। আরও জানা গেছে, ঢাকার রায়েরবাগের বাসিন্দা বর্ষা চৌধুরী। তিনি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা ‘সরেজমিন’-এ কাজ করেছেন কয়েক মাস। সমপ্রতি সে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন।
Ref: http://mzamin.com/details.php?mzamin=NTIxOA==&s=MTE=