সদ্য অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ
করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন।
প্রথমে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল এরপর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পরে শপথ নেন অন্যান্য দল থেকে নির্বাচিত সদস্যরা। সবশেষে শপথ নেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতরা।
গতকাল বুধবার দুপুরে ২৯০টি সংসদীয় আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মুদ্রিত গেজেট নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছে। গেজেট প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এই শপথ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের জন্য যথাসময়ে সংসদ ভবনে উপস্থিত থাকার জন্য ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ আসনে প্রার্থী ছিলেন। এ দুটি আসনেই তিনি বিজয়ী হন। গতকাল নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের পর সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে রংপুর-৬ আসনটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান। তিনি গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ শপথ গ্রহণের পর সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বান করা হবে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হবে। সংসদ নেতা নির্বাচনের পর পরই বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে। এই চিঠি পেয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদ নেতাকে সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভাও পরে শপথ নিবেন।
শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে গতকাল বিকাল ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবনের শপথ কক্ষ পরিদর্শন করেন। সংসদের কর্মকর্তারা দুপুর থেকেই নতুন সংসদ সদস্যদের শপথপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি শুরু করেন।
এদিকে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও যশোর-১ আসনে শেখ আফিলউদ্দিন ও যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলামের নাম গেজেটে রাখা হয়নি। এই দুজনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে নির্বাচন কমিশনে। এ কারণে কমিশন ইতিমধ্যে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। নোটিসে তাদের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে আগামী ১০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাকি আট আসনের কিছু কেন্দ্রে পুনরায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে, তাই তাদের নামে গেজেট প্রকাশ হয়নি। আসনগুলো হলো কুড়িগ্রাম-৪, যশোর-৫, দিনাজপুর-৪, লক্ষ্মীপুর-১, বগুড়া-৭ এবং গাইবান্ধা-১, ৩ ও ৪। বিরোধী দলের কর্মসূচি চলাকালে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংসতার কারণে ইসি এসব আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। আগামী ১৬ জানুয়ারি এই ৮টি আসনে স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ১৪৭ আসনের মধ্যে ১৩৯ আসনের ফল নির্বাচন কমিশন থেকে বেসরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়। এর আগে ইসি ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩২, জাতীয় পার্টি (জাপা) ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১, তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফ ১টি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়ে দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসছে। গতকাল জাপার নির্বাচিত এমপিদের এক বৈঠকে শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে এইচএম এরশাদ ছাড়া ৩২ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দলীয় প্রধান নন, তার স্ত্রী রওশন এরশাদ হবেন সংসদে বিরোধী দলের নেতা। তবে এরশাদের নেতৃত্বেই দলীয় এমপিরা শপথ নিতে যাবেন বলে রওশন এরশাদ জানান।