জানুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় দেশে আসার পর টাকার বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতি থেমেছে। গত এক সপ্তাহে এ দুই মুদ্রার বিনিময় হার কমেছে প্রায় এক টাকা। জানাচ্ছেন আবদুর রহিম হারমাছি।
জানুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) দেশে আসার পর টাকার বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতি থেমেছে। গত এক সপ্তাহে এই দুই মুদ্রার বিনিময় হার প্রায় এক টাকা কমেছে।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা বা তার কম দামে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকার বেশি।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের গতি-বিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ কার্যদিবসে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) ডলারের দাম প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ পয়সা করে কমেছে। ডলারের দর ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলেই আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জানুয়ারি মাসে ১২২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে এক মাসে এতো রেমিটেন্স আর কখনো আসেনি।”
অন্য দিকে আমদানি ব্যয়ও কমে এসছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপও কমেছে। এর ফলেই ডলার এখন ‘উল্টো দিকে’ হাঁটতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন গভর্নর।
“এখন প্রতিদিনই ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে,” বলেন আতিউর রহমান।
গভর্নর বলেন, “ঠিক যেভাবে ডলারের দাম উঠছিল। সেই একই গতিতে কমছে। যারা বেশি লাভের আশায় ডলার ধরে রেখেছিলেন, তারা ইতিমধ্যে বাজারে ডলার ছাড়তে শুরু করেছেন। এতে বাজারে ডলার সরবরাহ বেড়েছে।”
এদিকে দেশে ডলার ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে বৃহস্পতিবার একটি সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
‘ইউজেন্স ইন্টারেস্ট রেট ফর ডেফার্ট ইমপোর্ট’ শীর্ষক এই সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিলম্বিত আমদানি ব্যয় উৎসাহিত করার জন্য এর সুদের হার লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট) থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে।
এই ব্যবস্থায় বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সঙ্গে সঙ্গে অর্থ পরিশোধ না করে পরে দিলেও চলবে। তবে এর জন্য ওই নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হবে। এতে করে আপাতত দেশে ডলার ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার সর্বনিন্ম বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা। পনের দিন আগে ২৯ জানুয়ারি এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা ৮৪ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ডলার।
অর্থাৎ, পনের দিনের ব্যবধানে টাকার মূল্যমান ডলারের বিপরীতে শূন্য দশমিক ১ শতাংশের মতো বেড়েছে।
গভর্নর বলেন, জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ, সার ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি মূল্য পরিশোধে ব্যয় বেশি হওয়ায় গত কয়েক মাসে বিদেশি মুদ্রার চাহিদাও ছিল বেশি। এতে করে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যায়। স¤প্রতি এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের যোগানও বৃদ্ধি পেয়েছে।
“ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কার্ব মার্কেটেও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে,” যোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজারে) প্রতি ডলার ৮৪ টাকা থেকে ৮৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এ বাজারে কিছুদিন আগেও ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা।
চলতি মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বড় কোনো আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ফলে টাকার মান বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন আতিউর রহমান।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে প্রায় ৯৭০ কোটি ডলার ছিল জানিয়ে আতিউর রহমান বলেন, “আমরা আশা করছি, শিগগিরই আইএমএফের ইসিএফ (বর্ধিত ঋণ সুবিধা) ফান্ড অনুমোদন হবে। তখন রিজার্ভ আরও বাড়বে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪১ শতাংশ।
নভেম্বর মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৩ শতাংশ। এই পরিমাণ ডিসেম্বরে ২৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ২৭ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথাম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি।
‘পাইপলাইনে’ থাকা বিদেশি ঋণ-সহায়তা ছাড় হলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থান আরও একটু মজবুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আতিউর রহমান।