রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে উত্সব মুখর পরিবেশে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন অতিবাহিত হলো। উত্সবের একটাই কারণ, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন রঙিন বই। প্রথম দিন সবাই এসেছে খালি হাতে। আর বাড়ি ফিরেছে ব্যাগ ভর্তি বিনামূলের বই নিয়ে। বই পাওয়ার আগে পরে শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস। কেউ কেউ নেচে গেয়ে এ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া হয় বই উত্সবের। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ উদ্যোগেই এই উত্সব পালন করে। কোথাও শিক্ষাবোর্ড, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থেকেই বই বিতরণ করেন। আবার কোথাও স্কুল প্রধানই উত্সবের আমেজে বই বিতরণ করেন। ছোট বড় অনুষ্ঠান ছিল প্রতিটি স্কুলেই।
ঘড়ির কাটায় সময় মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা হাজির হয় স্কুলে। বই নেয়ার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। খাতায় হাজিরা দিয়েই বই সংগ্রহ করে। আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে প্রতিটি স্কুল ক্যাম্পাস।
এর আগে এক শ্রেণীর সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ছিল মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক। ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে বই দেয়ায় শিক্ষার্থীরা আশার আলো দেখেছে। এর আরো আগে থেকেই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের বই পাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বৃহস্পতিবার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুল চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণী অনুষ্ঠান ‘পাঠ্যপুস্তক উত্সব’ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুল, বিসিএসআইআর হাইস্কুল, ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কামরুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হাফেজ আবদুর রাজ্জাক দাখিল মাদরাসার কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
এ সময় ছাত্রছাত্রীরা নেচে-গেয়ে, আনন্দ-উল্লাস করে, লাল-সবুজ প্ল¬াকার্ড-ফেস্টুন নেড়ে, বেলুন উড়িয়ে এক উত্সবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মন্ত্রীর হাত থেকে নতুন বই পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী সবাই নতুন বই উঁচু করে ছবি তোলে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে সরকার ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ১৬ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বছরের প্রথম কর্মদিবসে ১২১ কোটি ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ১৭২টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়ে সফলতার অনন্য রেকর্ড করেছে। সরকারিভাবে এতো বই ছাপিয়ে বাঁধাই করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিতরণের ইতিহাস বিশ্বের কোথাও নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, এবতেদায়ী, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ের তিন কোটি ৭৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২৬৮টি বিষয়ের মোট ২৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৮ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রাথমিকের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ২ কোটি ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩টি বিষয়ের ১১ কোটি ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৯০৭টি বই, ইবতেদায়ী ২৬ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৪টি বিষয়ের ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার ২৬৭টি বই, মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১৪টি বিষয়ের ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৯০টি বই, এসএসসি ভোকেশনালের ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১৬টি বিষয়ের ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩১০টি বই এবং দাখিল ও দাখিল ভোকেশনালের ২১ লাখ ১৭ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭১টি বিষয়ের ২ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৪টি বই।