স্মৃতিটা এখনো তরতাজাই থাকার কথা সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে আর মিসবাহ-ইউনিসদের। এই একই মাঠ, মাত্রই দুই বছর আগের কথা। তৃতীয় দিন বিকেলে শ্রীলঙ্কা যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামল, সামনে ঝুলছিল হারের খড়্গ। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের লিড ছিল ৩১৪! কিন্তু টানা প্রায় দুই দিন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলেছিল লঙ্কানরা। কাল একটা সময় মনে হচ্ছিল দুই বছর আগের আবুধাবিকেই বুঝি ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। হঠাতই রং পাল্টে দিলেন বিলাওয়াল ভাট্টি।
হ্যাঁ, সেই ভাট্টি, এই টেস্টের যিনি অন্যতম আলোচিত চরিত্র। ম্যাচের প্রথম দিন পাকিস্তানের একাদশে যাঁর নাম দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। আমিরাতে বেশির ভাগ সময়ই দুই স্পিনার নিয়ে খেলে পাকিস্তান। সাঈদ আজমলের পাশাপাশি আবদুর রেহমান যথেষ্ট সফলও মরুর মাটিতে। কিন্তু রেহমানকে বাইরে রেখে এবার মিসবাহ টেস্ট ক্যাপ তুলে দিলেন ভাট্টির হাতে। বিস্ময়ে কুঁচকে থাকা অনেকের ভ্রুগুলো সত্যিকারের বিস্ময়ে রূপ দিতে খুব বেশি সময় নেননি ভাট্টি। প্রথম ইনিংসে উইকেটসংখ্যায় সফল বোলার জুনাইদ খান হলেও সেরা বোলার আসলে ভাট্টিই। নিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট। কাল সেই ভাট্টিই আবার দূর করলেন মিসবাহর কপালের ভাঁজ।
দুই বছর আগের সেই ড্র ম্যাচের অন্যতম কারিগর ছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। পৌনে ১১ ঘণ্টা উইকেটে থেকে করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। কাল কৌশল সিলভাকে নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন সেই সাঙ্গাকারা। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটিটি যখন সেঞ্চুরি ছোঁবে, আচমকাই ভাট্টির জোড়া আঘাত। সেটাও আবার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ‘জোড়া’। ফিফটি পেরোনো সাঙ্গাকারাকে স্লিপে ক্যাচ বানানোর পর প্রথম বলেই অসাধারণ এক ডেলিভারিতে আউট মাহেলা জয়াবর্ধনে! লেংথ থেকে হুট করেই লাফিয়ে ওঠা বলটি জয়াবর্ধনেকে হতভম্ব করে ব্যাটে ছোবল দিয়ে গালির হাতে। শ্রীলঙ্কার ভরসা হয়ে থাকা কৌশল সিলভাকে ফিরিয়ে জুনাইদ শেষ বিকেলে নিশ্চিত করেন সতীর্থদের নির্ভার রাত। তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে মাত্র ৭ রানে!
অথচ দিনের শুরুটা ছিল শ্রীলঙ্কার। লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে কাল দারুণ কিছু করতে হতো শ্রীলঙ্কান বোলারদের। নতুন বল হাতে সেটাই করেছেন লাকমল-ইরাঙ্গারা। সেঞ্চুরি নিয়ে দিন শুরু করা মিসবাহকে পর্যন্ত নড়বড়ে মনে হচ্ছিল লঙ্কানদের পেসে। শফিক-আকমলরা সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। শেষ দিকে হেরাথ এসে চার বলে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিয়েছেন লাঞ্চের আগেই। ৬ উইকেট নিয়ে কাল পাকিস্তান করতে পেরেছে আর মাত্র ৫৬ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসেও দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই লঙ্কান ওপেনার। দ্বিতীয় জুটিতে সেটা ধরে রেখেছিলেন সাঙ্গাকারা-সিলভা। শেষবেলার এসে সব গড়বড়। প্রথম সেঞ্চুরিটা না পাওয়ার হতাশা নিয়ে যখন ফিরলেন সিলভা, শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমও তখন আবুধাবির বিকেলের মতোই গুমোট!