এ যুগের মানুষের জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই মহাশক্তিধর যোগাযোগব্যবস্থার ভবিষ্যত কী হবে? নতুন বছরের (২০১৪ সাল) মধ্যেই কি এর লাগাম টেনে ধরা হবে? আর ইন্টারনেটে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ কি মেনে নেবে বাকি পরাশক্তিগুলো? যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য দেশগুলোর অবস্থানের প্রভাব কি ইন্টারনেটেও পড়বে? প্রযুক্তিবিশ্বে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এ রকম হাজারো প্রশ্ন। নাটকীয় কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে গত বছর এসব প্রশ্নের উদ্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন প্রায় ১০ হাজার গোপন নথিপত্র চুরি করেন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কম্পিউটারব্যবস্থা থেকে। এসব তথ্য ফাঁসের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ চাপের মুখে পড়ে এবং ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে যায়। এ ছাড়া, ইন্টারনেটের ব্যবহারবিধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
১৯৭৩ সালে গবেষক ভিন্টন সার্ফ ও রবার্ট কানের প্রস্তাবিত কম্পিউটার যোগাযোগব্যবস্থাটিই বর্তমানে কিছুটা পরিবর্তিত রূপে ইন্টারনেট হিসেবে প্রচলিত রয়েছে। এটি মূলত তৈরি হয়েছিল বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও সামরিক বাহিনীর সুবিধার্থে। ওই দুই গবেষক তথ্য আদান-প্রদানে যে সহজতর প্রযুক্তি চালু করেছিলেন, তা-ই এখনো ব্যবহূত হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের কাজে। কিন্তু ওই প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত ও জটিল থেকে জটিলতর রূপ নিয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এটি এখন প্রভাব ফেলছে বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, গোয়েন্দা তৎপরতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিনোদন, যৌনতা, বিজ্ঞান, শিল্পায়ন প্রভৃতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবে এটির ব্যবহারে ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না।
স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর গোয়েন্দা নজরদারি বিষয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দেন। ভালো-মন্দ নয়, আলোচনা হচ্ছে তাঁর কাজের প্রভাব নিয়ে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের চাপে চলতি বছরের মধ্যেই ইন্টারনেটে তথ্য বিনিময়ের নীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে এ আলোচনা। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ওয়েবসাইটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণকারী দুই সংস্থাকে ঘিরে দ্বন্দ্বের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এদের একটি হচ্ছে ওয়েবসাইটের নাম অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান)। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থন রয়েছে। অপর সংস্থাটির নাম ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইইউটি)। ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আইইউটির নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের হাতে। আইক্যান ও আইইউটি উভয় প্রতিষ্ঠানই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে থাকে। ব্রাজিল, চীন ও রাশিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমকক্ষ পরাশক্তিগুলো চায় ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকুক শুধু আইইউটির হাতে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দেশগুলোয় ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ইন্টারনেটকে সব সময় স্বাধীনই দেখতে চান সার্ফ ও কান।