বছরের চমক এরশাদ

বছরের চমক এরশাদ

বছরের সেরা চমক ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। রাজনৈতিক জীবন নিয়েই এ আলোচনা। মহাজোট সরকারে থেকেও সরকারের কঠোর সমালোচনা। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় পক্ষই তাকে কাছে টেনেছে। শেষ পর্যন্ত কখনো নির্বাচন বর্জন, অংশগ্রহণ আবার বর্জনের মধ্য দিয়ে মাঠে জাতীয় পার্টি বিভ্রান্তিতে থাকলেও সরকার এবং ভোটযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়নি। এরশাদকে যেতে হয়েছে সিএমএইচে সরকারি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায়। এবার বছরের শেষ দিনটি সিএমএইচেই কাটল তার। সব মিলিয়ে বিদায়ী বছরজুড়েই রাজনীতিতে আলোচনায় বারবার এসেছেন এরশাদ।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোট সরকারে থেকেও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক-ডেসটিনি-পদ্মা সেতু দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিত্যপণ্যসহ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, সরকারের ৫ শতাংশ জনসমর্থনও নেই। সারা বছরই তিনি বলেছেন, একক নির্বাচন করবেন। মহাজোট সরকারের সঙ্গে তার দল আর নেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু তারপরও গত জুলাইয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের মেয়র প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় এসে এরশাদের দোয়া নেন। দুই দলের জোর তদবিরের মধ্যেই এরশাদ নির্বাচনের একদিন আগে গুলশানের একটি ব্যাংকে বসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন দেন। বিএনপিবিহীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না তাই নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন বছরের প্রথম থেকেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই ১৮ নভেম্বর সকালে বনানী কার্যালয় থেকে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেন। ২০ নভেম্বর সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেন। দলের ৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, একজনকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এ মতবিরোধে এরশাদের সঙ্গ ত্যাগ করেন তার দীর্ঘদিনের ‘ফ্যামেলি মেম্বার’ কাজী জাফর। পরে দুজন দুজনকেই ‘বেইমান’ অভিহিত করে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার করেন।

কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই আবার ৫ ডিসেম্বর নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দলের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন। ঘোষণা দেওয়ার পর ২৬ ঘণ্টা আত্দগোপনে থাকেন। এর পর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ফেরেন। বিকালে বাসার নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ থেকে জাপা নেতারা পদত্যাগ করবেন। আবারও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও ঘোষণা দেন তিনি। এ পদত্যাগ নিয়ে শুরু হয় জমজমাট নাটক। প্রধানমন্ত্রীর দেখা না পাওয়া, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র নিজের কাছে জমা নেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাষ্ট্রপতির দেশের বাইরে থাকা, অতঃপর ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠানো। এর পর থেকে অদ্যাবধি একটি অংশ পতাকাবাহী গাড়ি করে নিজেদের কার্যালয়ে যান, বঙ্গভবনে গিয়ে বৈঠকও করেন, অনেকে বাসায় বসেই ফাইলে সই করেন। পাশাপাশি এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে পার্টির একটি অংশ সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচনে থেকে যাওয়ার। এরই মধ্যে ১৩ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর আগেই ১২ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারিধারার বাসায় থেকে র্যাব এরশাদকে তুলে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখে। তিনি এখনো সেখানে আছেন। এদিকে এরশাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ অমান্য করে রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পাটি নির্বাচনে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬৯টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতাও হয় তাদের। এসব আসনে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই। এর মধ্যে প্রায় ২ ডজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী বৈতরণী পারও করেছেন।

 

 

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর