আপনার মেয়েরা এত ঝগড়া করে কেন? এই মেয়েরা ঝগড়া করছ কেন। কিসের জন্য এত কথা বল। চুপ থাকো বেয়াদব কোথাকার। আপনাদের অফিসার কোথায়? এতক্ষণ তো অনেক কথা বললেন। মুখটা বন্ধ কেন। দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে। এরা সবাই গোপালগঞ্জের। গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে। গোপালগঞ্জ থাকবে না। যারা এসব করছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন তাঁর বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে কথাগুলো বলেন।
বেগম জিয়া রবিবার দুপুর তিনটায় নয়াপল্টনের উদ্দেশে গুলশানের বাসভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি তাঁর বাড়ির ভেতরে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ধমকের সুরে বলেন, ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করেন। ধাক্কাধাক্কি করবেন না। আমরা কেউ ধাক্কাধাক্কি করতে আসিনি। আমাদের গায়ের ওপর উঠে পড়বেন না। দূরে থাকেন। আপনাদের জায়গা যেখানে সেখানে থাকে। আপনাদের তো রাস্তায় থাকার কথা। বাড়িতে এসে গেছেন কেন? এক পর্যায়ে তিনি পুলিশের অফিসারদের লক্ষ্য করে বলেন, আপনাদের মেয়েরা এ রকম ঝগড়া করে কেন? এই মেয়েরা চুপ করো। কয়দিনের চাকরি হয়েছে, এত কথা বলো? কিসের জন্য এত কথা বলো। চুপ থাক। বেয়াদব কোথাকার।
বেগম জিয়া নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে। এর পর তিনি বাসার ভেতরে রাখা গাড়িতে বসেন কিছুক্ষণ। তার পর গাড়ি থেকে নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর এক হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। বাড়ির উল্টো দিকে অপেক্ষায় থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে অন্য হাত নেড়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। (তাঁর বক্তব্যের অডিও ও শ্রুতিলিখন বিডিনিউজ থেকে নেয়া।)
ক্ষুব্ধ বেগম জিয়া বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আজকে মিথ্যাবাদী সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, মা বোনদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি দরদ আছে আমাদের, মায়া আছে। সে জন্য আমরা জনগণকে গুলি করে হত্যা করতে পারি না। কিন্তু আপনারা যেভাবে হত্যা করছেন, তার জবাব আপনাদের দিতে হবে।
প্রতিদিন আপনারা আসবেন, বসে থাকবেন গেটের সামনে। ঠিক আছে। প্রতিদিন আমিও এ রকম বের হব। চলুক, কত দিন চলে।
কী মনে করেছেন কী? দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈত্রিক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের, যে গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান?
যদি সাহস থাকে, কাউন্টার প্রোগ্রাম করে দেখাতেন। সাহস নেই, দশটা লোকও আসে না। ভাড়াটিয়া লোক ভাড়া করে ডিসি এসপিদের দিয়ে লোক আনায়। বুঝি এটা। না হলে এ রকম করুণ পরিণতি হয়? ১৫৪টা সিট আনকনটেস্টেড হয়ে যায়? আর বাকি রয়েছে কী? বাকিগুলোও করে ফেলবে।
ৃওটা কোন ইলেকশন নয়, এটা যে সিলেকশন হয়েছে, ভাগাভাগির নির্বাচন হয়েছেÑ এইটা আজকে জাতির কাছে পরিষ্কার। দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার।
তাই মানুষ আজকে ধিক্কার দিচ্ছে। ধিক্কার দিই আমরা এই সরকারকে। এই সরকারকে ধিক্কার দিই।
আজকে কী করছেন? আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আপনারা দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু আমি মনে করি, দায়িত্বটা সুন্দরভাবে পালন করেন। সম্মানের সঙ্গে যাতে আমরাও কাজ করতে পারি, আপনারাও কাজ করতে পারেনÑ সেভাবে আপনারা দায়িত্ব পালন করেন। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই।
পুলিশবাহিনী, কিন্তু এটা তো ঠিক নয়Ñ যে আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেবেন না। এটা তো ঠিক নয়। এটা তো ঠিক না।
আপনাদের যে অফিসার ছিল, সে গেল কোথায়? তার সাথেই তো আমি কথা বলতে চেয়েছি; কেন আমার পথ আটকিয়েছে? কিন্তু সে কোথায়? কেন সে আসছে না এখন সামনে?
এতক্ষণ তো অনেক কথা বললেন। আপনি কে? এখন মুখটা বন্ধ কেন? এই যে মহিলা, আপনার মুখটা এখন বন্ধ কেন? বলেন তো কি বলছিলেন এতক্ষণ ধরে?
মুখটা বন্ধ কেন এখন? দেশ কোথায়, গোপালী? গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলিয়ে দেব বুচ্ছেন, গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।
আল্লাহর গজব পড়বে, আপনারা যা শুরু করে দিয়েছেন। কতগুলা আলেমকে হত্যা করেছেন, এতিমকে হত্যা করেছেন। কতগুলা বিডিআর অফিসারকে হত্যা করেছেন। সেদিন কোথায় ছিল হাসিনা? সেদিন হাসিনা কোথায় ছিল?
এতগুলা অফিসার যে মারল, ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করল, সেদিন হাসিনার এই ফোর্স কোথায় ছিল? কেন সে ফোর্স পাঠায় নাই। আসলে সে নিজেই জড়িত ছিল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে, সেজন্যই।
আজকে তো এমন অনেক আননোন চেহারা দেখা যায়, যাদের চেনা যায় না যে তারা আসলেই বাংলাদেশী কি না। বাংলাদেশের আজকের যে কর্মসূচী ছিল, আপনারা যদি আসলেই দেশকে ভালবাসতেন, তাহলে আজকে ছিল আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং.. এবং ডেমোক্রেসি ফর রোড মার্চ। ডেমোক্রেসি ফর মার্চ ছিল আমাদের কর্মসূচী। গণতন্ত্রও চাবেন না, দেশ রক্ষা করতেও চাবেন না। গোলামি করবেন? দালালি করবেন? এই গোলামি তো রাখবে না। লেন্দুপ দর্জির (সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী) ইতিহাসটা পড়ে দেখেন। সেও কিন্তু টেকে নাই বেশি দিন। তাঁকেও বিদায় দিয়েছে। দালালি করে, দেশ বিক্রি করে। কাজেই এই দেশ বিক্রি চলবে না হাসিনার।
দেশ রক্ষা হবেই ইনশাল্লাহ। দালালি বন্ধ করতে বলেন। আর হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন। জনগণের সঙ্গে থাকেন। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন। তবেই কাজে দেবে। দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে।
আজকে সকলের দায়িত্ব হয়ে গেছে, দেশ বাঁচানো, মানুষ বাঁচানো। আর আপনারা ঘরে ঘরে ঢুকে এখন মানুষ হত্যা করছেন। মনে করে যে এগুলোর হিসাব নেই, এই মা বোনের কান্না, এই আলেম এতিমের কান্না, এই বিডিআর অফিসারদের ওয়াইফদের কান্না এগুলো কি বৃথা যাবে? এগুলো কোন দিনও বৃথা যাবে না। আজকে যারা এই জুলুম নির্যাতন করছেন, তাদেরও এদের মতো একদিন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বা মুছতে মুছতে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।
এখনও সময় আছে। ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করেন। আমরা কেউ ধাক্কাধাক্কি করতে আসিনি। আমি বলছি আপনারা চাকরি করেন, আপনারা করবেন। কিন্তু এ রকম আমাদের গায়ের ওপর উঠে পড়বেন না।
দূরে থাকেন। দূরে থাকেন। আপনাদের জায়গা যেখানে সেখানে থাকেন। আপনাদের রাস্তাতে থাকার কথা। আপনারা বাড়ির মধ্যে এসে যাচ্ছেন কেন? কী, আপনাদের মেয়েরা এত ঝগড়া করে কেন?
এই মেয়েরা চোপ কর। কয়দিনের চাকরি হয়েছে যে এত কথা বল?
কিসের জন্য এত কথা বল? চোপ থাক। বেয়াদব কোথাকার।
আপনাদের অফিসার কোথায় গেল? আসলো না? তাকে বলবেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
বুঝেছেন? কী বোঝেননি কথাটা? এটা তো বাংলা ভাষা? নাকি অন্য কোন ভাষায় বলতে হবে আপনাদের? বুঝেছেন? সেই অফিসার কোথায়? তাকে বলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে।
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, দালালি করেন। গোলামি করেন। হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। দেশের সঙ্গে থাকেন। জনগণের সঙ্গে থাকেন। বোঝেননি? এটা তো বাংলা ভাষা। আপনাদের সেই অফিসার কোথায়, যে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল, তাঁকে ডাকেন। তাঁকে বলবেন আমার সঙ্গে যেন দেখা করে। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব। এ কথা বলার পরই ফটকের ভেতরে ঢুকে যান খালেদা জিয়া।
মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচীতে যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে উঠলেও বাধার মুখে তাঁকে গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ফিরতে হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করল। সেদিন হাসিনা কোথায় ছিল? সেদিন হাসিনার এই ফোর্স কোথায় ছিল? কেন সে পাঠায়নি এই ফোর্সকে। কারণ সে নিজেই জড়িত ছিল এই হত্যাকা-ে।
পুলিশের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন। জনগণের সঙ্গে থাকেন। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন। তবেই কাজে দেবে। দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। আজকে সবার দায়িত্ব হয়ে গেছে দেশ বাঁচানো। আর আপনারা এখন ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছেন। মনে করেন এগুলোর হিসাব নাই। এই মা বোনের কান্না, বিডিআরের অফিসারদের ওয়াইফদের কান্না কি বৃথা যাবে? এগুলো কোন দিন বৃথা যাবে না। আজকে যাঁরা এই জুলুম নির্যাতন করছেন, তাঁদেরকে একদিন এদের মতো চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।
পুলিশকে লক্ষ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আজ চারপাশে এত অপরিচিত মানুষ দেখা যায়। বোঝা যায় না এরা বাংলাদেশী। আজ যে কর্মসূচী ছিল, তা তো গণতন্ত্র আর দেশ রক্ষার জন্য। দেশ রক্ষা করতে চাইবেন না, গোলামি করবেন, দালালি করবেন? এই গোলামি থাকবে না। এই দেশ বিক্রি চলবে না হাসিনার। দেশ রক্ষা করা হবে।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। সরকারের যদি লজ্জা থাকে তাহলে অবিলম্বে তাদের বিদায় নেয়া উচিত। সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা হলেন গণতন্ত্রের রক্ষক। আর যে পুলিশ বাহিনী রয়েছে, এরা গণতন্ত্র রক্ষায়ও নেই, দেশ রক্ষায়ও নেই। দেশরক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষার সৈনিক আপনারা। আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র আজকে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন গণতন্ত্র এবং দেশ রক্ষার যে ডাক আমি দিয়েছি সে ডাকে যেন তাঁরা সাড়া দেন। জনগণ সাড়া দিয়েছে। আজকে সরকার ভীত হয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছে। যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে জনগণ আসতে না পারে। কিন্তু এ কর্মসূচী চলবে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আজকে মিথ্যাবাদী সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মা বোনদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। দেশের প্রতি জনগণের প্রতি আমাদের দরদ আছে, মায়া আছে। আমরা জনগণকে গুলি করে হত্যা করতে পারি না। কিন্তু আপনারা যেভাবে হত্যা করছেন, তার জবাব দিতে হবে।
তিনি পুলিশ সদসদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিদিন আপনারা আসবেন, বসে থাকবেন গেইটের সামনে। ঠিক আছে। প্রতিদিন আমিও এরকম বের হব। চলুক, কতো দিন চলে। কি মনে করেছেন? দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈত্রিক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের, যে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান? যদি সাহস থাকে, কাউন্টার প্রোগ্রাম করে দেখাতেন। সাহস নেই, দশটা লোকও আসে না। ভাড়াটিয়া লোক ভাড়া করে ডিসি এসপিদের দিয়ে লোক আনায়। বুঝি এটা। না হলে এ রকম করুণ পরিণতি হয়? ১৫৪টা সিট আনকনটেস্টেড হয়ে যায়? আর বাকি রয়েছে কি? বাকিগুলোও করে ফেলবে। ওটা কোনো ইলেকশন নয়, এটা যে সিলেকশন হয়েছে, ভাগাভাগির নির্বাচন হয়েছে এটা আজকে জাতির কাছে পরিষ্কার। দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার। তাই মানুষ আজকে ধিক্কার দিচ্ছে।
তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আপনারা দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু আমি মনে করি, দায়িত্বটা সুন্দরভাবে পালন করেন। সম্মানের সঙ্গে যাতে আমরাও কাজ করতে পারি, আপনারাও কাজ করতে পারেন। সেভাবে আপনারা দায়িত্ব পালন করেন। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু এটাতো ঠিক নয় যে আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেবেন না।