নোয়াখালী সফররত যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এলাকার জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, যিডা কইরত্যাম হাইত্যাম ন, হিডা কইতাম ন। বেক কতা কই লাভ নাই, যেগিন করা যাইতো ন।
শুক্রবার সকালে নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
এলাকার চাকরি প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেকে আমার কাছে যেয়ে বলেন, ‘হেতে চাকরি হাইলে আই হাইতাম ন কিল্লাই? আমি তাদের বলি, ‘আমনের হোলারতো আওয়ামী লীগ করারও যোগ্যতা নাই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে কয় রক্ত দি হালাইছি আমনের লাই’ তখন আমি বলি, ‘আর লাই রক্ত দিলে কি চাকরি দিতাম হারিয়াম নি? রিটেন হরিক্কায় টিকতে অইব।’
তিনি বলেন, অযোগ্য লোককে চাকরি দিয়ে আমি দেশকে মেধাশূন্য করতে চাই না। ‘ওই মিয়া কতা কানে ঢুকছেনি?’
এলাকার মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমনেরা আগে কইতেন, আর গাড়িত হতাকা লাগবো কবে? অন লাগছে।’
এ সময় এক বৃদ্ধ মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হতাকার বাতাসও লাগন লাগব, গা’ত।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের লাই আই চেষ্টা কইরতেছি, আমনেরা ওয়েট করেন।’
মন্ত্রী বলেন, জনমতের বাতাস প্রতিকূলে বইলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো জনসভায় যেয়ে ৩ ঘণ্টা করে সময় নষ্ট করতে রাজি নই। মন্ত্রী যদি ৩ ঘণ্টা করে সভায় থাকে তাহলে কাজ করবে কখন?’
উপস্থিত জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও মন্ত্রীদের প্রটোকল দেওয়ার জন্যে এতো সময় নিবেন না। এর চাইতে নিজের কাজ করবেন।
মন্ত্রী বলেন, বিরোধীদল তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে, সরকারকে জবাব দিতে হবে উন্নয়ন করে। পাল্টা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নয়।
বিরোধীদলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের না নিয়ে আমরা মাঠে খেলতে চাই না।’
পদ্মাসেতুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ সরকারের সময়ই ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ প্রস্তুতিমূলক অবকাঠামোর কাজ শেষ করতে চাই।’
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যদি ক্লিয়ারেন্স নাও দেয়, তবে অন্য দেশ বা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হবে। বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথাও হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
যোগাযোগমন্ত্রী জানান, সরকারের এ মেয়াদে দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করতে না পারলেও বিলিং প্রসেস চলছে। আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রসেস চলবে।
যারা এসব ব্যাপারে সমালোচনা করেন, তাদের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘সমালোচনা সরকারকে শুদ্ধ করে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মাসেতুর ব্যাপারে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু আরো বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে যানজট নিরসনের ব্যাপারে। আমার এখন মূল চিন্তা এটি।’
বিভিন্ন স্থানে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন নয়, বরং কাজের উদ্বোধন করায় বিশ্বাসী।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পাথরে নাম লেখায় আমি বিশ্বাস করি না, মানুষের হৃদয়ে নাম লেখাতে চাই। পাথর আমাকে ভোট দেয় না।’
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার হারুন উর রশীদ হাজারির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. নওশের আলী, জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম।
এরপর মন্ত্রী ওটারঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, ভূঁইয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় ভবন এবং ঘোষবাগ কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভবন উদ্বোধন করেন।
এ সময় মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার সব ধরনের আশ্বাস দেন।
এরপর চাপরাশিরহাট-ভূঁইয়ারহাট রাস্তা পাকাকরণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন এবং চাপরাশিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করেন।
কিছুক্ষণ পর মন্ত্রী মুরা আমিরাবাদ রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন উদ্বোধন করন। এ সময় মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্যে ছোট শিশুদের লাইন ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলে তিনি স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের তিরস্কার করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান অতিথি আসার ঘণ্টাখানেক আগে থেকে এ শিশুদের দাঁড় করিয়ে রাখলে শিশুদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি অসুস্থও হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি ভবিষ্যতে শিশুদের এ ধরনের অনুষ্ঠানে না আনতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেন।
দুপুরে যোগাযোগমন্ত্রী নুলুয়া ভূঞা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন এবং ৪৬০ জন ভূমিহীনের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দলিল হস্তান্তর করেন।