জাল নোটের বিষয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাংসদ আব্দুল জলিল এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের দেওয়া বক্তব্য সঙ্গতিহীন ও অনভিপ্রেত। এমন বক্তব্য জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। গভর্নর সচিবালয়ের পক্ষে এটি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, মঙ্গলবার গণমাধ্যমে জালনোট সংক্রান্ত একটি গোল টেবিল বৈঠকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এমপির বক্তব্যের কয়েকটি অংশের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যমতে, গোল টেবিল বৈঠকে বলা হয়েছে-প্রতিদিন পাঁচ হাজার কোটি টাকার জাল টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে এবং প্রতি ৩-৪টি নোটের একটি জাল। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সঞ্চারী এ জাতীয় বক্তব্য অনভিপ্রেত। দেশে সর্বমোট ৬৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ আসল নোট রয়েছে। প্রতিদিন ৫ হাজার কোটি টাকার জালনোট ছাড়া হলে আসল নোট ও জাল নোটের সংখ্যা ও অনুপাত কী ভয়াবহ হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়। এ জাতীয় পরিসংখ্যান সুচিন্তিতি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
এতে বলা হয়, জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে এ সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জাল টাকার বিস্তার ও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছে এবং জাল টাকার প্রসার রোধে জাল টাকা প্রস্তুত ও বিস্তারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সময়োপযোগী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এছাড়া জাল টাকা উৎপাদন ও বিস্তার রোধে অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এজন্য কাজ করছে জাল টাকা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স। প্রতিটি জেলাতেও টাস্ক ফোর্সের শাখা সক্রিয় রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, জাল টাকার প্রসার রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ খুবই সক্রিয় রয়েছে এবং সম্প্রতিক সময়ে জাল টাকা তৈরির যন্ত্রপাতি, রঙ, কালি, কাগজ ও জাল দেশি বিদেশি মুদ্রাসহ কয়েকটি চক্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশের ৪৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সবগুলো শাখাতেই জালনোট শনাক্তকারী মেশিন স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তা কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকদল নিয়মিতভাবে ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শন করে থাকে এবং ভল্টে কোনওভাবে জালনোটের অনুপ্রবেশ ঘটলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী ব্যাংক লি., জনতা ব্যাংক লি., মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. ও যমুনা ব্যাংক লি.) এর প্রধান শাখা সমূহে আলোচিত ১০০ ও ৫০০ টাকার মোট ৯ লাখ ৭ হাজার ৮১৫ পিস নোট সুক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করা হয়। পরিদর্শনে ১০০ বা ৫০০ টাকার নতুন বা পুরাতন ডিজাইনের কোনও জালনোট শনাক্ত হয়নি। তবে ব্যাংকের ভল্টে জাল নোট প্রাপ্তি কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।