নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চাহিদা মোতাবেক নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে মাঠে নামতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শুরু করবে সেনা সদস্যরা। যে পাঁচ জেলায় সবকটি আসনে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলো বাদে বাকি ৫৯টি জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। এরই মধ্যে সেনা সদস্যরা বিভিন্ন জেলায় যাওয়া শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটের পরও ৪ দিন অর্থাত্ ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে অবস্থান করবে সেনা সদস্যরা। প্রতি জেলায় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের (৭৪০ জন সেনা সদস্য) পাশাপাশি মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ইত্তেফাককে বলেছেন, নির্বাচনী দায়িত্বের বাইরে সেনা সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করবেন না। তাই যেসব জেলায় ভোট গ্রহণ হচ্ছে না (চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও জয়পুরহাট) সেখানে কোনো সেনা সদস্য মোতায়েন করা হবে না।
শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলার মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বেশ কদিন ধরেই অবস্থান নিয়ে আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বুধবার রাতেই সেনাবহর বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে জেলাগুলোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ থেকে একটি সমন্বয় সেল কার্যকর থাকবে। জেলায় সেনা ক্যাম্প মোতায়েন করা হলেও রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে তারা সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত তারা থাকবেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
গত ২০ ডিসেম্বর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন। সিইসি জানান, আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনী কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। সশস্ত্র বাহিনীর কার্যাদি সম্পর্কে ইসি থেকে বলা হয়েছে, ‘সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ ও ১৩১ ধারা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তার নির্দেশনা’ অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কাজ হবে নির্বাচনী কাজে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার কেন্দ্র স্থলে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেবেন এবং ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসাবে কাজ করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা ও থানা এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। উপকূলবর্তী এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে নৌ-বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কে নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সশস্ত্র বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যৌথ সমন্বয় সেল স্থাপন করতে হবে। উক্ত সেলে স্বরাষ্ট্র, তথ্য মন্ত্রণালয়, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন।’
কমিশন থেকে আরো বলা হয়েছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তর নির্ধারণ করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আবাসন ব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। স্ব স্ব বাহিনী তাদের রেশন নির্ধারণ করবে। প্রশাসনিক খাত থেকে জ্বালানি খরচ বহন করতে হবে। স্ব স্ব বাহিনী যানবাহন ব্যবহার ও নির্ধারণ করবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতের যে কোন নির্বাচনের তুলনায় এবার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বেশি সময় ধরে মাঠে অবস্থান করবেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ৩ থেকে ৫ দিন আগে সেনা মোতায়েন করা হতো। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পর সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যায়। এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১২ দিনের জন্য সেনা মোতায়ন করা হয়।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ১৪৬টি আসনের নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৬৭০ জন। ভোট কেন্দ্র ১৮ হাজার ১২৩টি। এর আগে ১৫৪ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ওই আসনগুলোতে আর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।