ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রথমবার তাও আবার এককভাবে জনবহুল উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী জল মাপতে নামছে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেধে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা সিপিএম’র লাল দূর্গের পতন ঘটিয়েছে তৃণমূল। এর পর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের কেন্দ্রীয় সরকারেও অংশীদার হয়েছে দলটি। কিন্তু এবার উত্তর প্রদেশে একাই লড়তে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল।
তৃণমূলের এই আত্মবিশ্বাসী চেহারা বেশ চমক দিলেও সর্ব সম্প্রতি আরেকটি ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে নতুন চমকের আভাস দিয়েছে।
গত মাসে তৃণমূলের সাবেক মিত্র বর্তমানের আপাত প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা রাজীব প্রতাপ রুদি এবং শাহনেওয়াজ হুসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেছেন। তবে এটা নির্দোষ সাক্ষাৎকার নয় এখানেই লুকেয় রয়েছে রহস্য।
তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা সাধারণে জানতে না পারলেও সাক্ষাৎকারটির পরিবেশ যে বেশ আন্তরিক ছিলো তাতে সন্দেহ নেই। কারণ খুব স্পষ্ট, মমতা বিজেপি নেতাদের আপ্যায়নের পাশাপাশি রাজিব রুদিকে তার একটি পেইন্টিংও উপহার দিয়েছেন। আর সেটির যথোপযুক্ত কদরও করেছে বিজেটি; পেইন্টিংটি এখন শোভা পাচ্ছে দিল্লির অভিজাত সংবিধান ক্লাবের প্রাইভেট লাউঞ্জে।
অবশ্য বিজেপি এই সাক্ষাতকে একান্তই সৌজন্যমূলক বলে দাবি করেছে। একে রাজনৈতিক রং না চড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তারা বলছে, মমতার সদ্য প্রয়াত মায়ের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতেই তাদের এই সাক্ষাৎ।
তবে এই সাক্ষাতকারকে ঘিরে কংগ্রেসের মধ্যে কিন্তু বেশ নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজেপি নেতাদের তৃণমূলের এমন মেহমানদারির পেছনে অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছে কংগ্রেস নেতারা। অনেকে তো বলেই ফেলেছেন, কেন্দ্রের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার টোপ দিয়ে ভাগিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে বিজেপি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও বলছে, কংগ্রেসের আশঙ্কা ইউপিএ জোটের এই শরিককে ভাগিয়ে নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন জোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে অর্ন্তভূক্ত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই এই সাক্ষাৎ।
এদিকে কংগ্রেসের উসখুস ভঙ্গি লক্ষ্য করে বিজেপি অনেকটা আশ্বাসের সুরেই বলছে, ‘আমাদের সৌজন্যসাক্ষাতে যদিও কংগ্রেসিরা বিপন্ন বোধ করছে, তবে আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য সেখানে যাইনি।’
তবে বিজেপি একে যতোই হালকা করার চেষ্টা করুক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ‘সৌজন্যসাক্ষাতের’ গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। জানা যাচ্ছে, সমবেদনা জানানোর সাক্ষাতের ফাঁকে নাকি বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও তৃণমূলের আলোচনা হয়েছে।
তবে ঠিক কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি গণমাধ্যম।
এই সাক্ষাতের ব্যাপারে কংগ্রেসের কোনো উদ্বেগ বলে প্রচার করলেও কপালের ভাঁজ কিন্তু গোপন করতে পারছে না কংগ্রেস নেতারা। রাজনীতির খোঁজখবর যারা রাখেন তারা বিজেপি-তৃণমূলের এই সাক্ষাতের তাৎপর্য ঠিকই অনুমান করছেন।
এদিকে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কংগ্রেসের এই বেকায়দা পরিস্থিতি তৃণমূলও ভালই উপভোগ করছে। তৃণমূল নেতা সুখেন্দু রায় তো বলেইছেন, ‘এটা সত্যি যে, বাজারে এখন ভালই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মমতার যেমন অনেক শত্রু আছে তেমনি তার অনেক বন্ধুও আছে।’
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই অবিশ্বাসের দোলাচল নিদেন পক্ষে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সম্পর্কেই চিড় ধরাবে। মাঝখান থেকে লাভবান হবে বিজেপি। তবে উভয় পক্ষই উত্তর প্রদেশের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বলে মনে হয়। ওই নির্বাচনের ফলাফলের পরই তারা সিদ্ধান্ত নেবে তাদের পরবর্তী কর্ম পরিকল্পনা।