অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের স্ত্রী মান্যতা দত্তের যকৃতে বড় আকারের একটি টিউমার ধরা পড়েছে। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণেই আবারও প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন সঞ্জয়। গতকাল শনিবার পুনের ইয়েরাওয়াড়া কারাগার থেকে মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় পৌঁছেছেন প্রভাবশালী এ তারকা অভিনেতা।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সঞ্জয় বলেছেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই প্যারোলে মুক্তি পেয়েছি আমি। আমাকে বিশেষ কোনো সুবিধা প্রদান করা হয়নি। প্যারোল নিয়ে লেখা বই পড়া উচিত গণমাধ্যমকর্মীদের। তাহলে তাঁরা বুঝতে পারবেন আর দশজন সাধারণ কয়েদির মতোই আমাকে বিবেচনা করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।’
সঞ্জয় আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর যকৃতে টিউমার ধরা পড়েছে। এর আগে আমাদের পরিবারে অনেকেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। মান্যতার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিত্সকেরা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল জানার পর প্রয়োজনীয় চিকিত্সার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। আপনারা সবাই আমার স্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন।’
এর আগে নিজের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ২৯ দিন কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন ‘খলনায়ক’ তারকা সঞ্জয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত আগস্ট মাসে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছিলেন সঞ্জয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর ১৪ দিনের জন্য মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়েই পুনের ইয়েরাওয়াড়া কারাগার থেকে সরাসরি মুম্বাইয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান সঞ্জয়। পরে আরও ১৫ দিন মুক্ত থাকার অনুমতি পান তিনি। মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৩০ অক্টোবর তিনি ইয়েরাওয়াড়া কারাগারে ফিরে যান।
কারাগারে ফেরার পর সঞ্জয় বলেছিলেন, ‘আমার পায়ে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তবে আগের চেয়ে খানিকটা উন্নতি হয়েছে। সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন যেন আবার আমি কারাগার থেকে দ্রুত বের হতে পারি।’
স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে চলতি মাসের শুরুর দিকে সঞ্জয়কে এক মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তির অনুমতি দিয়েছিলেন পুনের বিভাগীয় কমিশনার প্রভাকর দেশমুখ। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর একটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীতে মান্যতাকে দেখা যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রভাবশালী তারকা হিসেবে সঞ্জয় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন—এমন বিতর্ক ওঠে। সঞ্জয়ের প্যারোলে মুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়। এতে করে সঞ্জয়ের প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি মান্যতার অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শর্তসাপেক্ষ সঞ্জয়কে প্যারোলে মুক্তি দেয় ইয়েরাওয়াড়া কারা কর্তৃপক্ষ। মুক্তির শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, এক মাস সময়ের মধ্যে মুম্বাইয়ের খার থানায় সপ্তাহে দুই দিন হাজিরা দিতে হবে সঞ্জয়কে।
সম্প্রতি মান্যতার যকৃতে বড় আকারের একটি টিউমার ধরা পড়ার খবর নিশ্চিত করেন তাঁর চিকিত্সক অজয় চৌঘুলি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্জয়কে ২১ ডিসেম্বর শনিবার এক মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয় ইয়েরাওয়াড়া কারা কর্তৃপক্ষ। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্দো-এশিয়ান নিউজ।
মান্যতার কার্ডিওলজিস্ট অজয় চৌঘুলি জানান, মান্যতার যকৃতে বড় আকারের একটি টিউমার শনাক্ত করা হয়েছে। মান্যতার অনিয়মিত হূত্স্পন্দনের কথাও জানান তিনি।
৫৪ বছর বয়সী সঞ্জয় তাঁর প্যারোলে মুক্তির আবেদনে উল্লেখ করেন, তাঁর স্ত্রী বুকব্যথা অনুভব করছেন। এ ছাড়া হঠাত্ করেই মান্যতার শরীরের ওজন কমে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন সঞ্জয়। অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থেকে তাঁকে দেখভালের কারণ দেখিয়ে এক মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন এই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ তারকা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে মুম্বাইয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি স্থানে ১২টি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৫৭ জন নিহত হয়। আর আহত হয় ৭০০ জনের বেশি। ভয়াবহ ওই সহিংসতার এক মাস পর বিস্ফোরণ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকা ও বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ।
এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে সঞ্জয় দত্তের বাড়ি তল্লাশি করে লাইসেন্সবিহীন একটি নাইন এমএম পিস্তল এবং একটি একে-৫৬ রাইফেল খুঁজে পায় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেলেও বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ২০ বছর আগের মামলায় গত ২১ মার্চ সঞ্জয়কে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
সঞ্জয় গত ১৬ মে আদালতে আত্মসমর্পণের পর প্রথমে মুম্বাইয়ের আর্থার রোড কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছয় দিন বন্দী থাকার পর তাঁকে ইয়েরাওয়াড়া কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এই মামলায় আগে দেড় বছর সাজা খেটেছেন সঞ্জয়। এই হিসাবে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁকে কারাবন্দী থাকতে হবে। কারাগারে কাগজের ব্যাগ তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছে সঞ্জয়কে। তাঁর তৈরি করা ব্যাগ জেলের বাইরে বিক্রি করছে কয়েকটি এনজিও।